বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রক্টরসহ ৩০ জনকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

সোমবার (৩০ জুন) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে তদন্ত সংস্থা ট্রাইব্যুনালে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়, যেখানে আবু সাইদ হত্যার সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৩০ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ উঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ, সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়সহ আরও অনেকে।

প্রসিকিউশন জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাইদ। তাকে হত্যার ঘটনার ভিডিও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ১৬ জুলাই আবু সাইদকে দুই হাত প্রসারিত করার অবস্থায় গুলি করার দৃশ্য দেশের ছাত্র সমাজকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

পরদিন থেকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আন্দোলন শুরু হয়, যার রেশে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের দীর্ঘ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জন নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল—যেটি মূলত মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত হয়েছিল—সেই ট্রাইব্যুনালেই এখন এসব ‘গণবিরোধী’ অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হোসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও এস এম মঈনুল করিম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।