পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গঠন করে আগামী ৬ মে এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে রিভিউর শুনানীর বিষয়ে ৫ জন বিচারপতির সমন্বয়ে আপিল বিভাগের বেঞ্চ আদেশ দিয়েছিলেন। গতকাল আপিল বিভাগের বেঞ্চ ছিল ৪ সদস্যের। বিচারপতির সদস্যসংখ্যা একজন কম থাকায় গতকাল আপিলের শুনানী হয়নি। আগামী ৬ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি করবেন। সেদিন আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক। এছাড়াও আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির, অ্যাডভোকেট মো. মতিউর রহমান আকন্দ, এডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালসহ শতাধিক আইনজীবী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ এবং ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউট টিএইচ তামিম। এ সময় আদালতে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আদেশের পর আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সব বিচারপতি না বসায় শুনানি পিছিয়েছে। কেননা আগে আপিল বিভাগের বেঞ্চে পাঁচ জন বিচারপতি ছিলেন। সম্প্রতি দুই জন নিয়োগের ফলে সাত জন হয়েছেন। তাই আগামী ৬ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি হবে। মামলার গুরুত্বের কারণেই শুনানি পেছানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে বিচার হলে আজহারুল ইসলাম ফাঁসির দ- থেকে রেহাই পেতেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এছাড়া যারা দেশে-বিদেশে এ নিয়ে আবেগ প্রকাশ করছেন, তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আগামী শুনানিতে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাবো বলে আমরা আশাবাদী।

তিনি আরো বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য সকল নেতৃবৃন্দের সাজার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যদি বিচারের ক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক অপরাধের সংজ্ঞা ও মানদ- মানা হতো তাহলে তারা সবাই খালাস পেতেন। এ মামলার শুনানীর মাধ্যমে অতীতের সকল মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবং ভবিষ্যতে এটি বড় ধরনের একটি নজীর স্থাপন হবে। যার কারণে মামলার গুরুত্ব ও উচ্চতা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ প্রয়োজন।

আর্ন্তজাতিক মানদ- সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারী বিচার প্রক্রিয়ার মানদ- মানা হয়নি। সেই হলো, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন ব্যক্তি যদি বক্তব্য দেন তাহলে তা সাক্ষ্য হিসেবে মানতে হলে উক্ত ব্যক্তিকে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে হবে। কিন্তু এই নিয়ম না মেনে পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যকেই সাক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন, এ মানদ-ের ফায়সালা হলে বড় ধরনের ভালো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।

জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার শুনানীর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাবেন। ছুটি থেকে আসার পর এ বিষয়ে শুনানী করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় শুনানী করা হয়েছে। আরো কিছু শুনানীর পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। সেই সাথে দলের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়েও সিদ্ধান্ত আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ট্রাইব্যুনালের পক্ষে প্রসিকিউটর টি এইচ তামিম বলেন, এটিএম আজহারের আইনজীবীদের উত্থাপিত প্রশ্নে ট্রাইব্যুনালের কোন আপত্তি নেই। কেননা বিচারকে আর্ন্তজাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে একটি সিদ্ধান্ত আসা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে, এটিএম আজাহারুল ইসলামের আইনজীবী আবেদনের শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগ। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনটি উপস্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক।

এর আগে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দ-াদেশ পান আজহারুল ইসলাম। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দ- বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

ওই দিন আদালতে আসামীপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (মরহুম) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (মরহুম) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার ওই আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।