শিক্ষার্থী আন্দোলনের দাবিতে সাড়া না দিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের প্রতি উত্তেজনাকর মন্তব্য করেছিলেন—এমন অভিযোগসহ ইনু, তাপস ও মাকসুদ কামালের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন সম্পর্কিত অডিও ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। এসব উপাদান বিচারকার্য মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১।

সোমবার দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করেন।

রায় ঘোষণার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ মামলায় হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত দমনপীড়ন চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন যা গণহত্যা, খুন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শামিল।

প্রতিবেদনে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলো হলো- সরাসরি আদেশ অর্থাৎ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনী, তার দল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরাসরি নির্দেশ দেন। গণহত্যা ও নির্যাতন হাসিনার নির্দেশের ফলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত, অঙ্গহানি এবং নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

৫ আগস্ট এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আসার সময় আশুলিয়ায় ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার মাঝে একজন জীবন্তও ছিল। এ ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।