সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১-এ আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে জবাবের জন্য দুজনকে নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। তাই আদালত অবমাননার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে সশরীরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ) এ এস এম রুহুল ইমরানের সই করা এই বিজ্ঞপ্তি গতকাল সোমবার দৈনিক যুগান্তর ও নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রথম ৫ আগস্টের কোন কোন আসামীকে উপস্থিত হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর নির্দেশক্রমে রুহুল ইমরান ২৫ মে এই বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন। বিজ্ঞপ্তিতে একই অভিযোগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলম (৪০) নামের ব্যক্তিকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও শাকিল আলমের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১-এ আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য দুজনকে নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। কোনো জবাব দাখিল করেননি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকতর সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের আবার নোটিশ দেওয়া হলো। তারা আগামী ৩ জুন সকাল ১০টায় ট্রাইব্যুনালে সশরীর উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব বা বক্তব্য দেবেন। তা না হলে সেই ধার্য তারিখে অথবা পরবর্তী যেকোনো তারিখে তাদের অনুপস্থিতিতে সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।

শুনানী শেষ আগামীকাল রায়

স্বামীসহ খালাস পাবেন

ডা. জুবাইদা আশা আইনজীবীর

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তিন বছরের সাজা থেকে ডা. জুবাইদা রহমান খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী এস এম শাহজাহান। একইসঙ্গে এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তার স্বামী ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও খালাস পাবেন বলে তিনি আশা করেন।

গতকাল সোমবার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে জুবাইদা রহমানের আপিল শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

এদিন শুনানি শেষে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিলের রায় দিতে ২৮ মে দিন ধার্য করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। আপিলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, কায়সার কামাল ও জাকির হোসেন ভূঁইয়া।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক।

এ মামলার বিচার শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমানকে দুই ধারায় মোট নয় বছর (৬ ও ৩ বছর একসঙ্গে চলবে) এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদ- দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।

রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর এবং ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছরের কারাদ- ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ডা. জুবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর চলতি বছরের ৬ মে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। এসে হাইকোর্টে আপিল করেন। গত ১৪ মে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জরিমানা স্থগিত করে ওইদিন আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হয়। গত ২২ মে এ মামলার শুনানি হয়েছিল।

আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, দুই দিন শুনানি শেষে কালকের পরের দিন অর্থাৎ ২৮ মে বুধবার রায়ের জন্য রেখেছেন। যে সম্পত্তিগুলো তারেক রহমানের নামে দেখানো হয়েছে , একটাও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত না, অসাধু না। একটা টাকা বা একটা সম্পত্তিও বাংলাদেশের বাইরে না। বাংলাদেশের বাইরে এই পরিবারের কোনো ঠিকানা নেই।

তিনি আরও বলেন, সেনানিবাসে মইনুল রোডের বাড়িটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে দেওয়া হয়েছিল। সেটাও এই মামলায় দুদক বলছে এটা তারেক রহমানের অর্জিত সম্পদ এবং এটা অবৈধ সম্পদ। অথচ এটা সরকার নিয়মকানুন মেনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আরেকটা সম্পত্তি আছে গুলশানে। সেটাও রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া। ৩৩ টাকা মূল্যমানের। অথচ মামলায় তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছিল। বিচারের নামে এ রকম প্রহসন আমি আমার ওকালতি জীবনে দেখিনি।

তারেক রহমানের খালাস প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি জুবাইদা রহমানের আপিল সামনে রয়েছে। তিনি আইন মেনে যথাযথভাবে আপিল করেছেন। আমাদের এখানে নজির আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলা, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মামলায়, জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তারেক রহমানের আপিল ছিল না। কিন্তু আমরা প্রধান বিচারপতির আদালতে আবেদন করেছিলাম, যদি মামলায় প্রমাণ না হয় তাহলে যিনি আপিল করতে পারেননি, আপিলকারীকে যদি খালাস দেন সেটা তার বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। সেই প্রার্থনা আদালত রেখেছেন। ইতিমধ্যে ৩/৪টি মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন। আমরা বলেছি, জুবাইদা রহমানের আপিল শুনতে গিয়ে যদি দেখেন যে তারেক রহমানের কোনো সম্পত্তি অসুদায়ে উপায়ে অর্জিত না, তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত না। যদি জুবাইদা রহমান খালাস হন এই খালাসের বেনিফিট আপিল না করলেও তারেক রহমানকে দিতে পারেন। ইতিপূর্বে দেওয়ার নজির আছে। কোর্ট তখন বললেন সেগুলো দিতে। আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) সেগুলো দাখিল করবো। আশা করি ন্যায় বিচার পাব। জুবাইদা রহমান খালাস পাবেন এবং উনার স্বামী তারেক রহমানও খালাস পাবেন বলে আশা করি।