বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর কাফরুল থানার আতিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি শহীদুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে প্রিজন ভ্যানে করে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে সকাল ১০টার দিকে অন্যান্য আসামীর সঙ্গে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালতে নেওয়া হয়। এসময় শহীদুল হক কাঠগড়ার এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাকে কিছুটা অস্থির দেখা যায়। বারবার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। তবে কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে কথা বলতে দেননি।
তারা আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে বলেন। এরপরও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন শহীদুল হক। এরই মধ্যে ১০টা ৭ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। তিনি শহীদুলসহ ৬ আসামীকে আতিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। ১০টা ১৬ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর শহীদুল হক আবারও তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে বাধা দেন। তারা বলেন, যার সঙ্গেই কথা বলেন না কেন আদালতের অনুমতি নিতে হবে। পরে শহীদুল হক আক্ষেপের সুরে বলেন ‘কী না করেছি পুলিশের জন্য!’। এরপর তাকেসহ অন্যদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকার বিআরটিএ অফিসের পেছনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন আতিকুল ইসলাম। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী আহসান হাবীব রাজধানীর কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় শহীদুল হক ২৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামী।
আর আ. লীগ করব না: এদিকে গতকাল সোমবার সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ছয়জনকে কারাগারে থেকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবেন না। এদিন শুনানি শেষে কামাল আহমেদ মজুমদার কিছু বলতে চাইলে আদালত অনুমতি দেন। এরপর কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, আমার ৭৬ বছর বয়স হয়েছে, চোখে সমস্যা। ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত। কারা কর্তৃপক্ষ ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দিচ্ছে না। কোরআন বা ডিজিটাল কোরআনও দিচ্ছে না। একের পর এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছি। আপনার কাছে আবেদন, ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দেওয়ার যেন অনুমতি দেওয়া হয়। পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি না। কি অবস্থায় আছে তাও জানি না।
তিনি আরও বলেন, এখন আমার বয়স ৭৬ বছর, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর রাজনীতি করব না। আপনার আদালতে সুবিচার প্রার্থনা করছি। এখন নাতি-নাতনিদের সাথে খেলার সময়। এই বয়সে আমার ওপরে জুলুম চালানো হচ্ছে। আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আছি কারাগারে। আপনার কাছে অনুরোধ, কারাগারে ডায়াবেটিস চেক করার জন্য ডিজিটাল কোনে যন্ত্র বা ওষুধ দেওয়া হোক। পবিত্র কুরআন শরীফও যেন দেওয়া হয়। এ সময় বিচারক বলেন, আপনার সব দাবি আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করুন।
শুনানি শেষে আদালত থেকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, রাজনীতি থেকে একদম অব্যাহতি নিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি। আর কোনো দলীয় পদে নাই। অব্যাহতি নিয়েছি বলতে পারেন। আজকে থেকে অব্যাহতি। আর রাজনীতি করব না। কারাগার থেকে আর রাজনীতি করব না। তিনি বলেন, এদেশে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। এই বয়সে রাজনীতি করা সম্ভব না। যার কারণে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমরা চাই, নতুন যুব নেতৃত্ব আসুক। পরে তাকে কারাগারে হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে বিআরটিএ অফিসের পেছনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন আতিকুল ইসলাম। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের স্বজন ব্যবসায়ী আহসান হাবীব। এ মামলায় আনিসুল হক ৪ নম্বর, সালমান এফ রহমান ৬, কামরুল ইসলাম ৮, কামাল আহমেদ মজুমদার ১০, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ১১ ও শহীদুল হক ২৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামী।