শনিবার জামিন আবেদনের শুনানি হয়। সেদিন আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ ও গালিগালাজ করেন কয়েকজন আইনজীবী।
হত্যাচেষ্টা ও চাঁদা দাবির মামলায় আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠার পর চার জন আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
তারা হলেন- ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক মিলন, ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের প্রাথমিক সদস্য মো. জাবেদ ও এস এম ইলিয়াস হাওলাদার।
রোববার (১৮ মে) সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমানের সই করা নোটিসে বলা হয়, “গত ১৭ মে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে তাদের অপেশাদারিত্বমূলক আচরণ ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, যা দলীয় ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে।
“এহেন অযাচিত এবং অপেশাদারমূলক আচরণের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে সভাপতি ও মহাসচিব বরাবর লিখিতভাবে আগামী ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কারণ ব্যাখা করার জন্য বলা হলো।”
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জুনাইদের আদালতে শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় হানিফ মেম্বার নামের এক আসামি গত ১২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
গত বৃহস্পতিবার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী। শনিবার জামিন আবেদনের শুনানি হয়। সেদিন আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ ও গালিগালাজ করেন কয়েকজন আইনজীবী।
বিচারকের সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের একটি কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সিনিয়র আইনজীবী খোরশেদ আলম বিচারককে বলছেন, ‘ঘটনার তারিখ, সময়, ঘটনাস্থল সেইম। দুইটা মামলা, এটা হয় না কি?’
এরপর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন। তবে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে ছিলেন। এসময় আবদুল খালেক মিলন নামের এক আইনজীবী বলেন, “আমরা যে আজকে কথা বলি, যদি ৫ অগাস্ট সরকার ফল্ট না করত আমরা গুম হতাম, খুন হতাম। আমরা সিএমএম কোর্টে রাজনীতি করেছি। ৮০ বছরের একজন লোক স্যারেন্ডার করেছে।”
এসময় আরেক আইনজীবী বলেন, “আমরা শুনানি করে চলে গেছি। উনি (বিচারক) জিআরওকে (আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা) বলেন, আপনি ভয় পেয়েছেন। আমরা কি এখানে ভয়ের কিছু করেছি?”
আবদুল খালেক মিলন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “শোনেন স্যার, বলতে তো এখন খারাপ শোনা যায়, আমাদের কারণে আজ এই চেয়ারে বসা আপনি। নইলে আপনি এখানে থাকতে পারতেন না। আমরা যে কষ্ট করছি গত ১৭ বছর। ৪ অগাস্টের ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেন। অন্যায় কোনো আবদার করিনি। ৫ অগাস্টের পর আজ পর্যন্ত কোনো কোর্টে তদবির করিনি। সবাই বলছে, আমি বলছি না। আমি যাই না।”
ফের জামিন আবেদন করার কথা বলে তখন আইনজীবীরা পরদিন শুনানির দিন রাখতে বলেন।
তখন বিচারক বলেন, “আপনারা স্পেশাল পুটআপ নিয়ে সিজেএম স্যারের কাছে যান।”
এরপরও একজন আইনজীবী বলেন, “আপনি কালকে একটা ডেট রাখেন। তাহলে আমরা বাঁচতে পারি। না হলে আমরাও বাঁচতে পারি না। কাল শুনানির জন্য রাখেন। বাদীকে নিয়ে আসব।”
এসময় শোনা যায়, ‘যান যান’। তখন এক আইনজীবী ধমকের সুরে বলেন, ‘চুপ’।
তারা বিচারককে বলেন, ‘এ আওয়ামী লীগের দালাল’। পরে তারা বিচারককে গালিগালাজও করেন।