জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামীর বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার কার্যক্রমের অংশ বিশেষ একশ্রেণির অসাধু ইউটিউবার বাজেভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ মনে করি না এবং এই ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা নিয়েও তার মধ্যে কোনো সংশয় নেই। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের মো. আমির হোসেন এসব কথা বলেন।

ট্রাইবুনালের বিচারিক স্বচ্ছতা নিয়ে জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, যারা ক্যাঙারু বলেন এটা তাদের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি না অস্বচ্ছতার কোনো কিছু আছে। কারণ এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের কোনো পক্ষ আমাকে কোনোভাবে চাপ দেননি। কেউ বলেননি যে, এটা বলবেন না, এটা করবেন না। এভাবে কখনোই কেউ কিছু করেননি। অতএব এই কোর্ট ক্যাঙারু কি না এই প্রশ্ন আমি জবাব দেবো না। আমি মনে করি না যে, এই কোর্ট কোনো ক্যাঙারু। কারণ আমাকে কেউ কোনো বাধার সৃষ্টি করেনি।

তিনি বলেন, আমি কোর্টে (ট্রাইব্যুনাল) কিছু বক্তব্য দিয়েছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই বক্তব্যটি বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আমি নিন্দা জানাই। লার্নেড কোর্ট আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আপনি যে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন আপনার আসামী খালাস পাবেন। এটা আপনি কীভাবে বললেন? সে প্রসঙ্গে কোর্ট লর্ডশিপদের বলেছি সাংবাদিকরা যখন আমাকে প্রশ্ন করেন- আপনার আসামীর কনসিকুয়েন্স বা প্রত্যাশা কী, সেক্ষেত্রে আমি এ কথা বলেছি। এটা আমার প্রফেশনাল দায়িত্ব।

আমির হোসেন বলেন, লার্নেড কোর্টে আরেকটা কথা বলেছি যে, আমি যদি বলি আমার আসামী খালাস পাবেন না সেটা কি সঠিক হবে? সেটা কি বলতে পারি? এটা বললে লার্নেড কোর্ট আমাকে যে নিয়োগ দিয়েছেন, তাহলে দেশের মানুষ মনে করবে যে এমন আইনজীবী দিলাম যিনি আসামীর ফাঁসি বা সাজা হবে বলছেন। সেই প্রসঙ্গে দু-একটা কথা নিয়ে মৃদু হাসাহাসি হয়েছে। কিন্তু তা বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে কিছু ইউটিউবে। এক শ্রেণির অসাধু ইউটিউবার বিভিন্নভাবে বিকৃত করেছে। ভবিষ্যতে এমন কোনো কথা না লেখার জন্য অনুরোধ করেন এই আইনজীবী।

মো. আমির হোসেন পলাতক আসামী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী। মামলার অপর এক আসামী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দী দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এ মামলার বিচার কার্যক্রমের একটি অংশ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি অংশ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে ট্রাইব্যুনাল ও আমির হোসেনের কথোপকথন রয়েছে। আমির হোসেনকে হাসতেও দেখা গেছে।