ঢাকার মিন্টো রোডে গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরার সময় আটক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সেই মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদ নামে তার এক সহযোগীকেও একই সময়ের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর আক্তার মোর্শেদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হক রিমান্ডের আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী এ তথ্য দিয়েছেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করে রমনা মডেল থানা পুলিশ। বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন রমনা মডেল থানার এসআই আজিজুল হাকিম। তবে ঢাকার মহানগর হাকিম দিলরুবা আফরোজ তিথি আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন। এরই মাঝে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা মডেল থানায় মামলা করে পুলিশ। এরপর তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার দুই দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে পুনরায় তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার গোলাম মোস্তফা আজাদকেও এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, এনায়েত করিমকে মন্ত্রীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়। সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, তিনি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে এসেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী দাবি করেন, বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে ভারত সমর্থিত নতুন একটি সরকার গঠন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল তার। তিনি বলেন, এনায়েত করিম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি বিদেশি সংস্থার এজেন্ট। গোলাম মোস্তফা তার পক্ষে কাজ করেন। তার মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেন। তারা অস্পষ্ট তথ্য দিয়েছেন। দেশের স্বার্থে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।
এনায়েত করিমের পক্ষে আইনজীবী ফারহান মো. আরাফ রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করেন। তিনি আদালতকে বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর এনায়েত করিম বাংলাদেশে আসেন। ১৪ তারিখ ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। এরই মাঝে মিন্টুরোডে গাড়ি থেকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হল। পরবর্তীতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দেওয়া হলো। তিনি বলেন, এনায়েত করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি পাসপোর্ট নম্বর দেননি, এটা কাল্পনিক তথ্য। ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ডে ছিলন, ইতিপূর্বে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পত্রিকায় দেখলাম, তার সাথে পুলিশ সদস্য ছিল। সে অবস্থায় কীভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা- করবেন? তিনি বয়স্ক, অসুস্থ ও নামাজি মানুষ। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করছি। রিমান্ড শুনানিতে গোলাম মোস্তফার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী। তিনি ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় যান ও ২০০৪ সালে আমেরিকান পাসপোর্ট পান। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্যদেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে আসেন।
মামলায় বলা হয়েছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মিন্টো রোড এলাকায় প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘুরতে থাকেন। তাকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ তার গাড়ি থামায়। কেন এখানে ঘোরাঘুরি করছেন, জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এ জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় এবং তার কাছে থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়।