দেশজুড়ে আলোচিত ৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট ১৭ আসামিকে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা, আশুলিয়ায় ৬ জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানো এবং লক্ষ্মীপুরে পাঁচজনকে হত্যা—এই তিনটি ঘটনার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম এখন পুরোদমে চলমান।
আবু সাঈদ হত্যা মামলা (রংপুর)
২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। মামলাটিতে মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন—সাবেক এসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ—এরই মধ্যে অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে ছিলেন এবং সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের গুলি এবং প্রশাসনের অবহেলা, এমনকি কিছু ছাত্র নেতার প্ররোচনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। আদালত এর আগে পলাতক ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন।
লক্ষ্মীপুর গণহত্যা মামলা
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলন চলাকালে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। এ মামলায় আওয়ামী লীগের এক উপজেলা সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের এক নেতা জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন। আদালত তাদের ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে বিচারাধীন।
আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানো মামলা
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন পলাতক। পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন এক সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সাত পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন: সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) আব্দুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, তৎকালীন ওসি সায়েদ, ডিবি পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক এবং কনস্টেবল মুকুল।
আদালতের কার্যক্রম ও নির্দেশনা
এই তিন মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, গাজী মনোয়ার হোসেন ও বি এম সুলতান মাহমুদ। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।
প্রসিকিউশনের মতে, এসব মামলার নেপথ্যে ছিল রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, প্রশাসনের মদদে দমন-পীড়ন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। আদালত ধাপে ধাপে তদন্ত ও বিচার এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।