ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদীকে গুলী করে হত্যা মামলার প্রধান আসামী ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী, বান্ধবী ও শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদে আবারও চার দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছিদ্দিক আজাদ এ আদেশ দেন। পল্টন থানার এ মামলার আদালত এদিন রিমান্ড শেষে রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাদী খুব কাছ থেকে আততায়ীর গুলীতে গুরুতর আহত হন গত ১২ ডিসেম্বর। ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে সপ্তাহখানেক চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে।

এদিন বিকালে এ মামলার প্রধান সন্দেহভাজন গুলীবর্ষণকারী ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে প্রথম দফার রিমান্ড শেষে আদালতে আনেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ১৫ ডিসেম্বর সামিয়াসহ তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছিলেন তিনি। দুদিন পর ১৭ ডিসেম্বর নুরুজ্জামানকে তিন দিনের রিমান্ডে দেয় আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতে তিনজনকে আবার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অপর আসামীকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি। পাঁচটি কারণ তুলে ধরে বিশেষ বিবেচনা করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আবার রিমান্ড আবেদন করেন তিনি। কারণ হিসেবে বলা হয়- হত্যার পিছনের উদ্দেশ্য উদঘাটন, এর সঙ্গে জড়িত, অর্থদাতা, ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তার এবং এজাহারে থাকা আসামী ও অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য উদঘাটন।

সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, শুনানি নিয়ে আদালত তিন আসামীর চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে অপর আসামী নুরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এখন পর্যন্ত মামলার গ্রেপ্তার হওয়া অপর আসামীরা হলেন- ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা হাসি বেগম, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ভারতে পালাতে সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। এদের মধ্যে তার বাবা ও মা আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।

হাদীকে গুলী করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন।

চলন্ত রিকশায় থাকা হাদীকে গুলী করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলীটি লাগে হাদীর মাথায়। গুরুতর আহত হাদীকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে বৃহস্পতিবার মারা যান।