রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম (৫০) সহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মমতাজ মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এছাড়া গ্রেফতার অন্যরা হলেন- রমনা যুব মহিলা লীগ সভাপতি হেলেন আক্তার (৫৫), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সুমগ্ন করিম (৪০), ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান অঞ্জন (২৭), ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাজ্জাদ (৪১), মিরপুর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল (৪৪), ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বাওয়ানী ইউনিট শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক আকাশ (৩০), ঢাকা মহানগর যুবলীগ-উত্তরের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাহীন (৪০) ও ঢাকা মহানগর আনন্দ বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিন্টু। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে সাবেক এমপি মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করে ডিবির একটি টিম।
এদিকে মমতাজ বেগমকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা এলাকায় মো. সাগরকে গুলী করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম আসামির সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা আসামীর জামিন নামঞ্জুর করে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলীবর্ষণ করেন। এ সময় সাগরের বুকে গুলী লেগে তার শরীরের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। পরে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়। মমতাজ বেগম এ মামলার ৪৯ নম্বর এজাহারনামীয় আসামী। শিল্পী মমতাজ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হন। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বির্তকিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে মানিকগঞ্জ-২ আসনে থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান মমতাজ।
অন্যদিকে, ডিবি-তেজগাঁও বিভাগের একটি দল মগবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রাত ১০টার দিকে হেলেন আক্তারকে গ্রেফতার করে। একই দিনে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিবি-উত্তরা বিভাগের একটি টিম রাজধানীর গুলশান-২ থেকে সুমগ্ন করিমকে গ্রেফতার করে। ডিবি-গুলশান বিভাগের একটি টিম রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাহমুদুল হাসান অঞ্জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া ডিবি-রমনা বিভাগের পৃথক টিম বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. সাজ্জাদ এবং বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন কাওলা এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম শাহীনকে গ্রেফতার করে।
ডিসি তালেবুর রহমান আরও বলেন, ডিবি-সাইবার বিভাগের একটি টিম রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোজাম্মেল হক আকাশকে গ্রেফতার করে। একই দিনগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর এলাকা থেকে মো. বাবুলকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগের একটি টিম। বাবুলের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার চারটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও সন্ধ্যা ৬টয়ার দিকে বংশাল এলাকা থেকে মো. মিন্টুকে গ্রেফতার করে ডিবি-লালবাগের একটি টিম। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল বলেও জানিয়েছেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।
মানিকগঞ্জে স্বস্তি
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : লাগামহীন কথাবার্তার জন্য ব্যাপক সমালোচিত মানিকগঞ্জ-২ নং আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার নিজ জেলা মানিকগঞ্জে স্বস্তির প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। খবরটি মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে মানুষ নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। অধিকাংশ মানুষই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে তাদের প্রতিক্রিয়ায়। সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামে হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে ২০১৩ সালে আওয়ামী পুলিশ গুলী করে আলেম ওলামাসহ চার ব্যক্তিকে হত্যা করে। সাধারণ মানুষ এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল মমতাজের উপর। প্রায় ১৫ বছর এমপি থাকাকালীন সময়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা মামলা আর বেফাঁস মন্তব্য করে চরম বিতর্কিত হন মমতাজ বেগম। এক সময় গান গেয়ে নানাভাবে দেশে বিদেশে মানুষকে বিনোদিত করত সেই কারণে দলমত নির্বিশেষে তাকে ভালবাসলেও পর্যায়ক্রমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় মানুষ তার ওপর চরম তিক্ত-বিরক্ত ছিল বিধায় তার গ্রেফতারের খবরে অনেকটা স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনকি মমতাজ বেগমের তৃতীয় স্বামী চক্ষু ডাক্তার মঈন হাসান চঞ্চল ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে খবরটি প্রকাশ করে বিশেষ ইঙ্গিত দেয়।
জানা গেছে, সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনে একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিএমপি জানিয়েছে, মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দুপুরে ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে রিমান্ড প্রার্থনা করা হলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ফলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।