আওয়ামী লীগ আমলে গুম-খুনে যারা জড়িত ছিলেন, তারা যেন বিচার এড়াতে কোনোভাবে দেশ ছাড়ার সুযোগ না পান, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গুমে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর কারও কারও দেশ ছাড়ার গুঞ্জনের প্রেক্ষাপটে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। সে সঙ্গে গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্দেশদাতা হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রশাসনের সব সদস্যের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়।

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের অভিযোগ আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত মঙ্গলবার শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। যাদের বিরুদ্ধ পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবেক সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি বর্তমান সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এই পদক্ষেপ গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের দীর্ঘ দিনের বেদনা-বিক্ষোভে কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। গুম–খুনে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চিহ্নিত অপরাধীদের ‘সেফ এক্সিট’ বা দায়মুক্তি দেওয়ার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ সোচ্চার থাকবে। গুম কমিশনের তদন্তকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে পরিচালনার মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিতের আহ্বান জানান ডাকসু নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামল। সেই সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত গুম, খুন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ১৮০০-এর অধিক গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। যার শিকার হয়েছেন সাধারণ নাগরিক, শিক্ষার্থী, নারী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা। এমনকি শিশুরাও এই নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থীরও গুম-খুনের শিকার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে ডাকসু নেতারা বলেন, তাদের অনেককে রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে আটক, নির্যাতন ও গুম করা হয়েছে। এখনো অনেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তাও জানা যায়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ কেবল ‘স্বৈরাচার’ শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক মহলই দায়ী নয়। বরং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা ও সংস্থাগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।

‘দেশে সত্যিকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ রাষ্ট্রের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের আস্থা ফিরে পাবে না। অপরাধীদের বিচার সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে না বরং তা তাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও গণমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করবে’- বলা হয় বিবৃতিতে। গুম কমিশনের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ডাকসু নেতারা আরও বলেন, এতে উদ্বেগজনকভাবে উঠে এসেছে যে গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি পার্শ্ববর্তী দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল। এই বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি এক গভীর হুমকি।

ঢাবিতে স্পেশাল

ক্লিনিং ক্যাম্প

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আরও পরিচ্ছন্ন ও সবুজ করে গড়ে তুলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে আয়োজনে স্পেশাল ক্লিনিং ক্যাম্প পরিচালিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ১৩ শতাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী একযোগে অংশগ্রহণ করেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ হিসেবে ড্রেন, নর্দমা, ফুটপাত ও ক্যাম্পাসের জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার, আইলেন্ড রং এবং মশার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, আজকে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে সফলভাবে বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ১৮টি ইউনিট, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ও প্রাঙ্গণ পরিষ্কারের জন্য একাধিক দল ভাগ করে কাজ করেছে। এই ক্লিনিং ক্যাম্পেইন তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা শুধু অন্যের দ্বারা পরিষ্কার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেরা যত্রতত্র ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকব। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ক্যাম্পাস গড়তে চাই এবং এটি সারা বাংলাদেশে একটি চমৎকার বার্তা পৌঁছে দেবে।

ডাকসুর সভাপতি ও ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আজকের পরিচ্ছন্নতা অভিযান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একসাথে কাজ করার এক অনন্য উদাহরণ। এটিকে বলবো ওয়ান স্মল স্টেপ ইন দা রাইট ডাইরেকশন। এই উদ্যোগ আজকে থেকে শুরু হয়েছে, আমাদেরকে আরও বহুপথ অতিক্রম করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই প্রয়োজন।

এ অভিযানে কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ডাকসু প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।