বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গাজীপুরে সংঘটিত তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগের ছয়জন শীর্ষ নেতা ও এক সাবেক সামরিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক মোঃ ওমর হায়দার এই আদেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে যাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তারা হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (ঘঞগঈ)-এর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান এবং এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মজুমদার।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হন। এর মধ্যে তিনটি হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। নিহতদের স্বজন ও আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকা-, যার পেছনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তির প্রত্যক্ষ মদদ ছিল।

আসামিদের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে গাজীপুর আদালতপাড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই আদালত চত্বর ছিল কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন করা হয়। কাশিমপুর ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয় আসামিদের। তাদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

এ সময় বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন। তারা “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও “ শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার দাবি করে শ্লোগান দেন। এতে আদালত এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাগুলোর তদন্ত প্রায় সম্পন্ন হয়েছে এবং চার্জ গঠনের জন্য পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী সপ্তাহে ধার্য করা হতে পারে। আদালতের আদেশে ডা. দীপু মনি, জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সাধন চন্দ্র মজুমদারকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও নজরুল ইসলাম মজুমদারকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “এই রাষ্ট্রীয় হত্যাকা-ের জন্য দায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তবে বিচার তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল দোসরের বিচার হবে।

নিহতদের পরিবার আদালতের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা চাই কেউ যেন রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধ করে পার না পায়।