জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিরোধিতা করে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পক্ষে শুনানি শেষ হয়েছে। তার আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে শুনানি করেন। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন।
মামলার বিচারকার্যের শুরুতে কিছু অভিযোগ পড়েন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক। তার মতে, ইনুর বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগই সত্য নয়। কারণ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় তিনি কোনো এমপি-মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন না। আন্দোলন দমনেও কমান্ডিং পোস্টিংয়ে ছিলেন না। অথচ তাকে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির আওতায় এনেছে প্রসিকিউশন। তাই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ট্রাইব্যুনালকে পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখার অনুরোধ জানাই। একইসঙ্গে আসামির ডিসচার্জ (অব্যাহতি) চাই।
এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা ছিলেন হাসানুল হক ইনু। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সব পরিকল্পনায় ছিলেন জোট নেতারা। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইনুর কথোপকথনের মাধ্যমেও কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ করে। আমরা ট্রায়ালে সব দেখাবো। অতএব তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করি। পরে আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৩ অক্টোবর ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ পড়ে শোনান প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। একইসঙ্গে তার বিচার শুরুর প্রার্থনা করেন। তবে আসামিপক্ষে শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী। পরে আজকের দিন ধার্য করা হয়। গত ১৪ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইনুর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সময় চান আইনজীবী নাজনীন নাহার। তিনি বলেছিলেন, এ মামলায় মোট ১৭০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র পড়তে ও প্রিভিলেজ কমিউনিকেশনের জন্য আট সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন। পরে আসামির সঙ্গে তিন দিন দুই ঘণ্টা করে কথা বলার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছিল। কারাগার থেকে আনার পর তার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জের (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) ওপর শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চান প্রসিকিউশন। তবে আসামিপক্ষে আরও দুদিন বাড়িয়ে সময়ের আবেদন করেন নাজনীন নাহার। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১৪ অক্টোবর ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
২৫ সেপ্টেম্বর জাসদ সভাপতি ইনুর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় সহযোগিতাসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর শুনানিতে আটটি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত।
গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই জাসদ নেতা। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়ায় নিজ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যান। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে কুষ্টিয়ায় হত্যাকা-ের শিকার হন ছয়জন। একইসঙ্গে আহত হন বেশ কয়েকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।