নির্যাতনের মাধ্যমে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন তিন সাক্ষী।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন তারা। ওই তিন সাক্ষী হলেন— মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন ও আলতাফ হাওলাদার। তাদের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হোসেন।
আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ও সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেছেন, পিরোজপুর—১ আসনের এমপি একেএম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমান একদিন আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা দিতে বলেন। প্রথমে আমি কোনোভাবেই তার বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হইনি। কিন্তু তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি এমনকি নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। পরে আমার ও পরিবারের লোকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মামলা করি।
মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, আল্লামা সাঈদী একজন বড় আলেম ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আমি কোনোভাবেই মামলা করতে চাইনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি একজন কমান্ডার ছিলাম। কিন্তু আল্লামা সাঈদীকে আমি কারো কোনো ক্ষতি করতে দেখিনি।
তিনি আরো বলেন, আমার বয়স হয়েছে। সবার জীবনেই মৃত্যু অনিবার্য। আমারও মরতে হবে। কিন্তু আজ আমি এখানে এসেছি জাতিকে সত্য জানাতে। আমি কেন আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। সেটাই জাতির সামনে তুলে ধরেছি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের আইনজীবী পারভেজ বলেন, ২০০৯ সালে মাহবুবুলকে ডেকে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন এমপি আউয়াল। দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে সাঈদীর নামে মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এ মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেন। তখনও তাকে যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে কথিত সেইফ হোমে এনে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগকারী বাকি দুই সাক্ষীরও একইভাবে জবানবন্দি নেন তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।
হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি একেএম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমানসহ ৪০ জন।
এর আগে, ২১ আগস্ট আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি গুমসহ নির্যাতনের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেন।