বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর ভাটারা থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে জামিন শুনানির জন্য ২২ মে দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে রোববার নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামী করা হয়। ভাটারা থানার পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আটকের পর নুসরাত ফারিয়াকে থানায় আনা হয়েছিল। তবে থানায় তাকে না রেখে পরে গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নুসরাত ফারিয়া ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এ ছাড়া মডেলিং ও সঞ্চালনায়ও সক্রিয় তিনি।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তিনি নিরপরাধ কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর সেই কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেড়ে দিলে আপনারাই বলবেন যে ছেড়ে দিলাম কেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। নিরীহ লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে আমরা অনেকবার বলেছি। আমরা বলেছি- শুধু দুষ্কৃতিকারীরা যেন আইনের আওতায় আসে এবং শাস্তি পায়, কোনো একটা নিরীহ লোক যেন ভোগান্তির শিকার না হয়। এসময় জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন, তাহলে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যেতে চাওয়া নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার (নুসরাত ফারিয়া) বিরুদ্ধে তো তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তো আমরা বলতে পারব না- এই অবস্থায় আবার ছেড়ে দিলে আপনারাই বলবেন যে ছেড়ে দিলাম কেন?’

যা বলেছেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার আমাদের জন্য বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। সোমবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দু-দিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিলো। তিনি লেখেন, ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা তো অনেকদিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নারভাসনেস থেকেই হয়তো বা এসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। তিনি আরও লিখেন, আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরো সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো-এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।