বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা আবেদনটি হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টারের (বিচার) কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী।

সম্প্রতি হাইকোর্ট ডিভিশনের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরের সম্ভাবনার কথা আলোচনায় এসেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম।

তিনি আবেদনে লিখেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন। তাই তিনি এ বিষয়ে তার মতামত ও আপত্তি সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছেন। আবেদনে এই আইনজীবী তার পাঁচটি যুক্তি উল্লেখ করেছেন।

এক: সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মূল আসন রাজধানী ঢাকায় থাকবে। হাইকোর্ট ডিভিশনের সেশন অন্যত্র বসানো গেলেও সেটি অস্থায়ী। এর স্থায়ী স্থানান্তর সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী।

দুই: বিভিন্ন বিভাগে আলাদা বেঞ্চ স্থাপন করা হলে একমুখী আইনপ্রয়োগে ভিন্নতা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এককতা ও নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তিন: বিভাগীয় শহরে বিচারপতি, স্টাফ, অবকাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য ও জটিল। এতে রাষ্ট্রের অর্থ, সময় ও দক্ষতার অপচয় হবে।

চার: স্থানীয় প্রভাব, সামাজিক চাপ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিচারকার্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি হাইকোর্টের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করতে পারে।

পাঁচ: ঢাকায় হাইকোর্টের মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। বিচারপতিদের বিভাগে পাঠানো হলে ঢাকায় বিচারিক জট আরও বেড়ে যাবে।

এদিকে ঢাকার বাহিরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থানান্তরে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ আইনজীবীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।

বিক্ষোভে আইনজীবীরা বলেন, ঢাকার বাহিরে হাইকোর্ট স্থানান্তর না করতে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা থাকলে, তা না মেনে এমন প্রস্তাবনা দিয়েছে সংস্কার কমিশন। যা আদালত অবমাননার শামিল।

আইনজীবীরা আরও বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থানান্তর হলে ন্যায় বিচার বিচ্যুত হবে, রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে। এতে দুর্বল হবে বিচারব্যবস্থা। এছাড়া, ঢাকার বাহিরে মেধাবী আইনজীবীদের সঙ্কটও রয়েছে। যা বিচার ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ঢাকার বাইরে ৬টি হাইকোর্টের বেঞ্চ বসানো হয় পরে তা চ্যালেঞ্জ হয় হাইকোর্টে। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের আপিল বিভাগ ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট নেয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে রায় দেন। এরপর আর কোনো সরকারই হাইকোর্টকে ঢাকার বাইরে নেয়ার সাহস দেখায়নি।