জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গতকাল মঙ্গলবার এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে।

এর আগে, গত সোমবার জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির হতে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৪ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

মামলার আরেক আসামী সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ওইদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর দুই আসামী হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী মামুন। একইসঙ্গে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামা কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা যায়।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

গত ১২ মে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে।

হাসিনাসহ ১২ জনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ : ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা ছয় মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই নির্দেশনা সরকারকে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব।

দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১ জুলাই দিন ঠিক করেছে আদালত। আদালতে হাজির হতে আরও যাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য শফিউল হক, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, নায়েব আলী শরীফ, সাইফুল ইসলাম সরকার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও শহীদ উল্লা খন্দকার।

দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ৬টি মামলার আজ ধার্য তারিখ ছিল। পাঁচ মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পুলিশ। এক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জন পলাতক অবস্থায় রয়েছেন মর্মে প্রতিবেদন এসেছে। আমরা আসামিদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের আবেদন করি। আদালত বিজি প্রেসের মাধ্যমে আসামিদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে দিন ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে। তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে কয়েক ধাপে ছয়টি মামলা করা হয়। এসব মামলার অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।