চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার মামলার দাখিলকৃত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।

গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দীন এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণের আদেশ দেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামী করা হয়েছে ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এছাড়া চন্দন দাশ মেথর, রিপন দাশ, রাজীব ভট্টাচার্য্য, শুভ কান্তি দাশ, আমান দাশ, বুঞ্জা, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ দাস, নয়ন দাশ, ওমকার দাশ, সামীর, সোহেল দাশসহ মোট ৩৯ জনকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে ২০ জন বর্তমানে কারাগারে থাকলেও বাকি ১৯ জন পলাতক।

নিরাপত্তাজনিত কারণে গ্রেফতারকৃত আসামিদের এদিন আদালতে সরাসরি হাজির করা হয়নি। তারা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ভার্চ্যুয়ালি শুনানিতে অংশ নেন। তবে মামলার বাদী ও নিহত আইনজীবীর পিতা জামাল উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, চার্জশিটে শুরুতে ৩৮ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আরও একজনকে যুক্ত করা হয়। পাশাপাশি আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় এজাহারনামীয় তিনজন ও সঠিক পরিচয় না পাওয়ায় এক আসামির অব্যাহতির আবেদন করেন। তবে এই তালিকায় থাকা সুকান্ত দত্ত নামের একজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনার পর হত্যাকারীদের সঙ্গে তার ছবি ভাইরাল হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ তাকে আসামি হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত রাখার আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ নভেম্বর ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আলিফ হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানে বলা হয়, এজাহারনামীয় ও তদন্তে প্রাপ্ত আসামি মিলিয়ে মোট ৪২ জন জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা এখনও পলাতক রয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান জানান, চিন্ময়ের উসকানি ও নির্দেশে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণেই তাকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় এজাহারনামীয় তিনজন ও সঠিক পরিচয় না মেলায় একজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছিল। তবে অস্ত্র ও মাদক মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি সুকান্ত দত্তকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত শেষে তাকে অভিযুক্তদের তালিকায় রেখেছেন।

প্রসঙ্গত, ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই মামলায় ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে গ্রেফতার করা হয়।