আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলার জবানবন্দিতে শাহরিয়ার হোসেন সজিব বলেন, চব্বিশের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের পিকআপ গাড়িতে কয়েকটি লাশ পুড়তে দেখি। আমার বন্ধু সজলের লাশও পাওয়া যায় সেখানে।

গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বাকি সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন সজিব।

জবানবন্দিতে সজিব বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে বাইপাইল মোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেই। দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এরপর আমরা বিজয় মিছিল করছিলাম। ওই সময় আমরা আশুলিয়া থানার দিক থেকে গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পাই। একপর্যায়ে বিজয় মিছিল নিয়ে থানার দিকে যাই আমরা। তবে থানার সামনে অবস্থান করছিল কয়েকজন পুলিশ।

তিনি বলেন, আমার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজল আগেই থানার সামনে চলে যান। তাকে দেখি আওয়ামী লীগ নেতা রনি ভূঁইয়া ধরে রেখেছেন। তৎকালীন এমপি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে চলাফেরা করতেন রনি। বন্ধু সজলকে ছেড়ে দিতে আমি রনিকে অনুরোধ করি। এরপর তিনি আমাকে ধরেন। আমার ঠিক পেছনে বন্দুকের গুলি লোড করছিলেন একজন পুলিশ সদস্য। তখন সজলকে সরে যেতে বলি। কিছুক্ষণ পর আমরা একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। পরে আমি এসএ পরিবহন অফিসমুখী রাস্তার দিকে চলে যাই। কিন্তু অল্প কিছু দূর যাওয়ার পর আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। তখন দেখি আমার পায়ে ছররা গুলি লেগেছে।

এই সাক্ষী আরও বলেন, আমার সামনেই একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। একটি বাসার গেট খোলা পেয়ে তাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। ১০-১৫ মিনিট থাকার পর গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির অবস্থা খারাপ হওয়ায় বের হওয়ার চেষ্টা করি। তবে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আবার ভেতরে ঢুকে যাই। এভাবে তিন-চারবার চেষ্টা করি। এক ঘণ্টার মতো গোলাগুলি হয়। এর মধ্যেই গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি মারা যান। সেখান থেকে ৬টার দিকে বের হই।

সজিব বলেন, বের হওয়ার পর থানার সামনে একটি পুলিশের পিকআপ গাড়িতে কয়েকটি লাশ পুড়তে দেখি। আর আমি সরাসরি বাসার উদ্দেশে রওনা দেই। পরদিন খবর পাই আমার বন্ধু সজলের লাশও থানার সামনে পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে থানার উদ্দেশে রওনা দেই। কিন্তু যাওয়ার আগেই ছেলের লাশ নিয়ে যান সজলের বাবা-মা। আমিসহ সজলের বাবা-মা মিলে লাশটি থানার সামনে থেকে নারী ও শিশু হাসপাতালে যাই। সেখানে কিছু কার্যক্রম শেষ করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তার মা-বাবা। গ্রামের বাড়িতেই তাকে দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, কয়েকদিন পর ফেসবুকে একটি ভিডিওতে লাশ গাড়িতে ওঠানোর দৃশ্য দেখি। আরেকটি ভিডিও দেখি যে গাড়িতে আমি পোড়া লাশ দেখেছিলাম, ওই গাড়িতে আগুন জ্বালানোর দৃশ্য দেখি। রনি ভূঁইয়া, তৎকালিন এমপি সাইফুল ইসলাম ও থানায় কর্মরত যেসব পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং যারা গুলি করেছে ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে তাদের দায়ী করি।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সজিবকে জেরা করেন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ও গ্রেপ্তারদের আইনজীবীরা। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন, প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।