রাজধানীতে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিব ও ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডাকযোগে নোটিস পাঠিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী এনামুল হক নবীন।
আইনজীবী নবীন বলেন, নোটিস পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে কালামের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা এবং পরিবারের একজন সদস্যকে মেট্রোরেলে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে আইনি নোটিসে বলা হয়েছে।
গত রোববার ফার্মগেইট এলাকায় ফুটপাত দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাঁটার সময় মেট্রোরেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলারের ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৩৫ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদ। এমন দুর্ঘটনার পর আলোচনার মধ্যে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেয় সরকার। সেইসঙ্গে দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় রোববার রাতে আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেছেন। মঙ্গলবার আইনি নোটিসে দুর্ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনার চরম গাফিলতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করা হয়।
নোটিসে বলা হয়, নিহত আবুল কালাম আজাদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার স্ত্রী ও দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। আবুল কালাম আজাদের অর্থায়নে তার ছোট ভাই পড়াশোনা করেন। মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনার চরম গাফিলতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে তিনি নিহত হন। এর দায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের স্থাপনা সমূহ এবং সরঞ্জামাদি দেখভাল ঠিকমতো করেনি এবং কোথায় কখন কী ধরনের ত্রুটি আছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ না করে ত্রুটিযুক্ত অবস্থায় মেট্রোরেল পরিচালনা করে আসছেন, যা জননিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মেট্রোরেলে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করছেন। ত্রুটি ও জননিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, যার ফলে আবুল কালাম আজাদ নিহত হন।
এর আগে আবুল কালাম আজাদের পরিবারকে যে পাঁচ লাখ টাকা সরকারি সহায়তার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেটিকে ‘খুবই সামান্য, বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অস্পষ্ট ও অবমাননাকর’ বলা হয়েছে আইনি নোটিসে। সেইসঙ্গে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও নিহতের পরিবারের একজনকে মেট্রোরেলে স্থায়ী চাকরি না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিয়ারিং প্যাড পড়ে প্রাণহানির ঘটনায় মঙ্গলবার ক্ষতিপূরণ ও তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদনও করেছেন দুই আইনজীবী। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের বেঞ্চে এই রিট আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। জনস্বার্থে এ দুই রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী তানভীর আহমেদ এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন।