এবার ব্যাংক খাতে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রীর নামে বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

দুদক ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের সাইপ্রাস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তালিকা আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে তাদের থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আবেদন করে দুদক। শুনানি নিয়ে আদালত তাদের এসব সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সাইপ্রাসে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে থাকা দোতলা একটি আবাসিক ভবন ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে থাকা ১৯টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে আরও ছয়টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে ১৭ জুন সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা আরও ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

গত ২৭ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা আরও ৫৫৯ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। গত ২৩ এপ্রিল এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা আরও জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে ৯ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও ৬৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসেবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৭ হাজার ২২১ টাকা।

দুদক আদালতকে জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। দুদক তার অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিরা এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন। আদালত শুনানি নিয়ে তাদের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন। এর আগে ১০ মার্চ এস আলম গ্রুপের আরও স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তিন দফায় সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা ১৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ১৪ জানুয়ারি মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন জায়গায় থাকা জমি, ফ্ল্যাট, প্লট, ভবনসহ ২০০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। দুদকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছিল, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১০০ কোটি ডলার পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক।

গত বছরের ৭ অক্টোবর মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, সন্তান, ভাইসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এস আলমসহ দেশের বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠির বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এস আলমের বিরুদ্ধে ‘ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, অবৈধ’ সম্পদের অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক।