বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব মোর্শেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানহানি, হয়রানি, শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে অপমানজনক প্ররোচনা, উস্কানি, অপরাধমূলক হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা করেছেন সংস্থার সাবেক বার্তা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম মানিক। আদালত মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. ফজলুল হক, প্রধান বার্তা সম্পাদক মোরশেদুর রহমান, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান, বাসস কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মোশতাক আহমেদ ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশন সভাপতি মতিউর রহমান তালুকদার।
বাদীর আইনজীবী তৌফিক শাহরিয়ার খান জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি রুজু করা হলে আদালত তা আমলে নেন। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট মো. জাকির হোসাইন অভিযোগসমূহের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ অক্টোবর । এ সময়ে বাদীর পক্ষে শুনানিতে আরো অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন।
মালমার আর্জিতে বলা হয়, বাদী আবুল কালাম মানিক বিগত ১৭ মার্চ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ‘অভুত্থানের উলটো স্রোতে বাসস’ -শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয় লেখেন। এতে এমডি মাহবুব মোর্শেদ ক্ষুব্ধ হন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী পত্রিকায় প্রতিবাদ না জানিয়ে কিংবা আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে নিবন্ধ রচয়িতাকে নানাভাবে হয়রানি, মানহানি ও শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেন। আসামীগণ এক জোট হয়ে উপসম্পাদকীয় প্রকাশের দিনই ফেসবুকে অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ সম্বলিত পোস্ট দিয়ে বাদীর মানহানি করেন। মামলার ২ নম্বর আসামী এবং বাসসের প্রধান বার্তা সম্পাদক মোর্শেদ রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্টটি দেন।
পোস্টে বলা হয়,‘বিএনপির লেবাসধারী সাংবাদিক আবুল কালাম মানিক প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে বাসসে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি তৎকালীন ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। ইউনিট চিফ থাকা সত্ত্বেও তিনি বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কোনো ভূমিকা রাখেননি। ২০২২ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত শীর্ষ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেন। এর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। বিএনপির এই লেবাসধারী সাংবাদিক আবুল কালাম মানিককে বিএনপি ফোরাম থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ -এই পোস্টের সাথে সহমত পোষণ করেন ৩ নম্বর আসামী মো. ফজুলল হক। বাদী উক্ত মানহানিকর ফেসবুক পোস্টটি সাইট থেকে সরিয়ে নিতে বার বার অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিগত ১৬ আগস্ট বাসস‘র এমডি বরাবরে লিখিত আবেদন করলেও আসামীগণ তাতে সাড়া দেননি।
উক্ত আবেদনে বাদী উল্লেখ করেছিলেন যে, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন। তা ছাড়া, আসামীগণ পরস্পর শলাপরামর্শ করে এ বছর ২৪ মে বাসস কর্মচারী ইউনিয়নের জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করেন। মামলার ৫ নম্বর আসামী মোশতাক আহমদ এই সভা আহ্বান করেন। এই সভায় মামলার ৬ নম্বর আসামী বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশন সভাপতি মতিউর রহমান তালুকদার যোগ দেন। সভায় ৪ নম্বর আসামী মাহাম্মদ আলী খান বাদীর চরিত্রহনন করে লম্বা ভাষণ দিয়ে কর্মচারীদের উত্তেজিত করেন। এ সময়ে মতিউর রহমান তালুকদার বাদীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মব জাস্টিসের হুমকি দেন। এদিকে বিগত ৫ জুলাই মামলার ৩ নম্বর আসামী ফজলুল হক বাসস অফিসে সাংবাদিক-কর্মচারীদের জরুরি যৌথসভা আহ্বান করে বাদীর বিরুদ্ধে একই ধরনের মানহানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং তাকে মোকাবেলায় অভিন্ন হয়রানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।
মামলার বিষয়ে বাদী আবুল কালাম মানিক বলেন, তিনি বাসসে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত একজন ব্যক্তি। হাসিনা আমলে তথ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে এক ডজন অভিযোগ জানিয়েও কোনো সাড়া পাননি। সরকার পরিবর্তনের একই নীতি বহাল থাকায় যুগান্তর পত্রিকায় ‘অভ্যুত্থানের উলটো স্রোতে বাসস’ শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেন। এতে বাসস এমডি মাহবুব মোর্শেদ মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়ে সংস্থার কর্মচারী ও বহিরাগত দুর্বৃত্তদের তার পেছনে লেলিয়ে দেন। দুর্বৃত্তদের বেআইনি কর্মকাণ্ডে তার সামাজিক মর্যাদা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। ইতোপূর্বে তিনি একই বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল থানায় দু’টি জিডিও দায়ের করেছেন।