সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৬ জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানো ও ৪ আগস্ট একজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করা হয়েছে।

একই সঙ্গে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ সোমবার দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল-২ এর অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

ট্রাইব্যুনালে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন। এরপর এ বিষয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।

শুনানির পর চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় জীবিত ছিলেন একজন। এমন বর্বরতা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে আটজন পলাতক। সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে আজ আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয়েছে। আগামীকাল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

এর আগে, গত ২১ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের ওই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় ওপেনিং স্টেটমেন্ট ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন।

এ মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৮ আসামি গ্রেফতার আছেন। বাকি আট আসামি পলাতক। গ্রেফতার আসামিদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

আসামিদের মধ্যে আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হক ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করেছেন। ট্রাইব্যুনালকে আবজালুল হক মৌখিকভাবে জানান, তিনি দোষ স্বীকার করছেন। একই সঙ্গে তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হয়ে পূর্ণাঙ্গ সত্য উন্মোচন করতে চান এবং ক্ষমা চান।

ট্রাইব্যুনাল তাকে অ্যাপ্রুভার হওয়ার বিষয়ে অনুমতি দিয়ে দুপুর ২টার মধ্যে আবেদন করার জন্য বলেছেন। এখন থেকে এই আসামির পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গ্রেফতার অন্য সাত আসামি হলেন- সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন ও কামরুল হাসান, সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।