চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতো দেশছেড়ে পালিয়ে না গিয়ে দেশেই অবস্থান করেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আর কিছুদিন পরেই গ্রেপ্তার হন তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলাকালীন সময় রাজসাক্ষী হন। ভিক্ষা করেন ট্রাইব্যুনালের কৃপা। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার সময় বলেন, উনি যে অপরাধ করেছেন তার শাস্তি মৃত্যুদ-। তবে তা কমিয়ে তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়া হবে। রায় যখন ঘোষণা করা হচ্ছিল তাকে ঘিরে ছিল পুলিশের এক ডজন সদস্য। আদালত কক্ষের মধ্যে কাচের ঘরে বসে হাতের ডানে টেলিভিশনে তিনি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেখছিলেন। রায় শোনার পরে টেলিভিশন থেকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ ট্রাইব্যুনালের দিকে। এরপর চোখ বুজে থাকেন।
ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা শেষ হলে হালকা আকাশী কালারের হাফ শার্ট আর খাকি প্যান্ট পরা মামুন উঠে দাঁড়ান। তার হাতে তখন সবুজ রঙের ডিজিটাল তজবিহ। কাউন্ট করে চলেছেন। ভিড় ঠেলে তার কাছাকাছি পৌঁছে একজন সংবাদকর্মী জিজ্ঞেস করেন আপনি কি ট্রাইব্যুনালের রায় সন্তুষ্ট? ন্যায় বিচার পেয়েছেন? তিনি মুখ গম্ভীর করে পুলিশের অন্যান্য সদস্যদের মাঝখানে থেকে সামনে এগিয়ে যান।
তাকে পাঁচ বছর কারাদ- দেওয়ার বিষয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়ার পিতা শাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতোই শাস্তি তৎকালীন আইজিপির জন্য প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা না হওয়াতে হতাশ হয়েছেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের রায় পুনর্বিবেচনা জন্য আহ্বান জানান।
মামুন ট্রাইব্যুনালকে বলেছেন, তার ৩৬ বছর জীবনে কখনো কোনো ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এবং জুলাই মাসে ডিআইজি হারুন অর রশিদ, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং পুলিশ কর্মকর্তা প্রলয় কুমার জোয়ার্দার পুলিশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যোগাযোগ করে সব ধরনের নির্দেশনা দিতেন।
রায়ে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করা হলেও পুলিশ ভবিষ্যতে কীভাবে সরকার বিরোধী কোন আন্দোলনে কি ধরনের ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে কোন অবজারভেশন বা পর্যবেক্ষণ ট্রাইব্যুনাল দেয়নি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামীর অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে।