খালিদ হাসান সিপাই, কুষ্টিয়া : প্রায় দুইমাস আগে সংশ্লিষ্ট আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক) শেখ গোলাম মাহবুবকে। এরপর বিচারক শূন্য আদালতে সীমাহীন ভোগান্তির অবসানে বিচার কার্যক্রম চালুর বিষয়ে নেই কোনও ফলপ্রসূ উদ্যোগ। এতে বিচাপ্রার্থীদের হয়রানি ও ভোগান্তির দীর্ঘসূত্রতা বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও আইনজীবীদের।

তারা দাবি করেন, সর্বশেষ ৪ বছর আগে এই কোর্টের সাবেক বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান বদলি হওয়ার পর থেকেই ঝিমিয়ে পড়েছে এই আদালতের বিচার কার্যক্রম। জরুরি ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যমান বিচারহীনতার বৃত্ত ভাঙার দাবি তাদের।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা চিলমারি চর গ্রামের আঁখি খাতুন (২৫) পারিবারিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের সামনে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দিনের পর দিন আদালত নির্ধারিত তারিখে এসে বিচারিক সেবা না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। আমার বাড়ি থেকে আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে কেমন দুর্গম প্রতিকূল অবস্থা পার হয়ে আসতে হয় তা তো আপনারা ভালোই জানেন।

আরও একজন বিচারপ্রার্থী খোকসা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা সেনগ্রাম থেকে আগত রোজিনা খাতুন বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বিচার প্রার্থনা করে আদালতে এসে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হবে আগে জানলে মামলা করতে আসতাম না। যা হবার হতো। মরার ওপরে তো কোনও শাস্তি নেই? সরকার যদি জরুরি ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারক নিয়োগ দিয়ে আমাদের হয়রানি বন্ধ করুক। আদালতে এসে যেন ঘুরে যেতে না হয়।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক) আদালতের বেঞ্চ সহকারী খুরশিদ আলম জানান, গত প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে আমাদের স্যার না থাকায় স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম চলছে না। বিশেষ কোনও জরুরী প্রয়োজন হয়ে জেলা জজ স্যার কারো ওপর দায়িত্ব দিয়ে সেটা সম্পন্ন করেন।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় দুই হতে যাচ্ছে, নারী-শিশু কোর্টের স্যার না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকে না।

কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের সরকারি কৌসুলি অ্যাড. আব্দুল মজিদ বলেন, বিচারক শুন্যতায় বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সাক্ষী শুনানি হচ্ছে না। মামলার বাদী-বিবাদীরা নির্ধারিত দিনে আদালতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে মক্কেলদের কাছে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ছি।

কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড এস এম শাতিল মাহমুদ বলেন, বিচারক শূন্যতায় এই আদালতের বিচারিক কার্যক্রম একেবারে বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা অন্যদিকে বিচারাধীন মামলার সংখ্যায় পাহাড় জমে যাচ্ছে।