পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র এখন অপরাধীদের হাতে! এসব অস্ত্র দিয়ে তারা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগের হাতেও চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্র। জানা গেছে- জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের লুট হওয়া প্রায় সহ¯্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই লাখের বেশি গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। পুলিশ বলছে এগুলো উদ্ধারে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তবে সব অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় পুলিশ চিন্তিত।
গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হয়। ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশে ৪৬০টি থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১১৪টি থানা-ফাঁড়িতে। এর মধ্যে শুধু আগুন দেওয়া হয়েছে ৫৮টিতে। ঢাকা মহানগরে ১৩টি থানা আক্রান্ত হয়েছে। আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৪ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের নানান স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। গোলাবারুদ লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন বোরের গুলী। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়।
এদিকে গণভবনের দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ট্যাকটিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদির মজুত ছিল। এছাড়া জাতীয় সংসদ ভবনেও এসএসএফের অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুত ছিল। গণভবনের দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ৩২টি ভারী অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই অভিযানে গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৭৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। তবে এখনও ১ হাজার ৩৭৭টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি।
কিছুদিন আগে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি এলাকার এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেন থেকে শাহিদা আক্তার নামের এক তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শাহিদার ‘প্রেমিক’ তৌহিদ শেখ ওরফে তন্ময়কে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, তদন্তে বেরিয়ে আসে, ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে শাহিদাকে গুলী করে হত্যা করেন তৌহিদ। তার তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহূত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। ৫ ডিসেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের শিশুপার্কের পেছনের নালা পরিষ্কার করার সময় এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী একটি শটগান, ছয়টি গুলি ও একটি গুলির খোসা পান। কুষ্টিয়া মডেল থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে এগুলো নিয়ে যায়। কুষ্টিয়া মডেল থানা-পুলিশ জানিয়েছে, ‘শটগান-গুলি কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের। এটি লুট হয়েছিল।’
এরআগে সকারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ আসামী পালান। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনো ৭০০ আসামী পলাতক। তাদের মধ্যে জঙ্গি, ফাঁসির দ-প্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৭০ জন আসামী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জন অন্য আসামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর দৈনিক সংগ্রামকে জানান, লুট হওয়া অধিকাংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই কিছু না কিছু অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। সর্বোচ্চ গুরুত্বদিয়ে যৌথবাহিনীর সম্বয়ে অভিযান অব্যহত আছে। এ অভিযান চলমান আছে। শিগগিরই খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হবে বলে আশা করেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তাইনমুল হক সাগর বলেন, একটি অস্ত্রও উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। তারপরও অস্ত্র উদ্ধার পুরোপুরি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাথা ব্যথা তো অবশ্যই আছে। লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কারও হাতে গেলে অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে। এদিকে, গত বছরের ৭ আগস্ট গাজীপুর কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কারাগার থেকে পলাতক আসামীদের মধ্যে ২৭ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে কারা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।