রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তাঁর ছেলে ও ভাইসহ পরিবারের আট সদস্যের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৭৮ কোটি টাকা পাচার ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাশাপাশি অভিযুক্তদের ১৩টি ব্যাংক হিসাব আদালতের আদেশে জব্দ করা হয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান।
আসামিরা হলেন-রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তাঁর ভাই আবদুল হাই এবং ছেলেরা-কাউসার আহমেদ অপু ও মেহেদী হাসান দিপু। এ ছাড়া তাঁদের স্ত্রী, ভাগনে ও আত্মীয়সহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫)-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন এবং ওই অর্থের মাধ্যমে অ্যান্টিগা ও বারবুডায় ২০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, 'অভিযুক্তরা প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এসব অর্থ বিদেশে পাচার করে এক দেশের নাগরিকত্ব পর্যন্ত গ্রহণ করেছেন। এটি সুপরিকল্পিত মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা।'
সিআইডি জানায়, মামলার তদন্তে দেখা গেছে, ২০২২ সালে মেহেদী হাসান দিপু ও কাউসার আহমেদ অপু বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রির নামে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু জমি বুঝিয়ে না দিয়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে রংধনু গ্রুপ পুলিশের একটি নির্মাণ প্রকল্প-পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর নামে ভুয়া কার্যাদেশ ও বিল দেখিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ২৭০ কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বারিধারা শাখা থেকে ভুয়া মূল্যায়ন রিপোর্ট দেখিয়ে আরও ৪০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৭৮ কোটি টাকা।
এ অর্থের একটি অংশ বিদেশে পাচার করে বিভিন্ন দেশে সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। সিআইডি জানায়, আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় মানিলন্ডারিং করেছেন এবং এতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাও সহায়তা করেছেন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, 'বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের অনুরোধে সিআইডি ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের ১৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এসব হিসাবে মোট প্রায় ১৭ কোটি টাকা রয়েছে।'
এ ছাড়া, যমুনা ফিউচার পার্কে রংধনু গ্রুপের মালিকানাধীন এক লাখ বর্গফুটের বেশি বাণিজ্যিক স্পেস (লেভেল-০২) আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়েছে। সিআইডি আরও জানায়, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার অন্যান্য আসামিদের পরিচয় ও সম্পৃক্ততা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও সম্পত্তি ক্রোকের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।