আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন,

মনে আছে হয়তো যে আমরা চোখ বেঁধে রাখা বন্দীদের কাছ থেকেও তারা চারপাশে কী কী বুঝতে পেরেছে, সব পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা নেই? শ’য়ে শ’য়ে এমন বর্ণনা রেকর্ড করার কারণে আজকাল অনেক ছোটখাটো জিনিস ম্যাচ করতে পারি, যা প্রথম দিকে একদম ইম্পসিবল লাগত। একটু একটু করে আমরা কিভাবে ডট মেলাই, আজকে তার একটা উদাহরণ দেই।

একদম শুরুর দিকে একজন বলেছিলেন উনি যখন চোখের বাঁধনটা একটু সরাতে পারতেন, উনি দেখতেন চারপাশে কাপড়। এ আবার কী! চারপাশে দেয়াল থাকলে বুঝতাম, কাপড় কোথা থেকে এলো?!

পরবর্তীতে আরও ক’জন বন্দী এই কাপড়ের কথা বলেন। সবার বর্ণনার অন্যান্য অংশ শুনে শুনে আমরা ততদিনে কোন বন্দিশালার কোন স্থানে এই কাপড় হঠাৎ হঠাৎ আবির্ভূত হত, তা মোটামুটি বুঝে যাই। কিন্তু কাপড় আবির্ভূত হওয়ার হেতু তখনও স্টিল আ মিস্ট্রি।

একজন বন্দী আবার কাপড়ের বিশেষ রঙটাও বলতে পারেন। একজন দেখতে পেরেছিলেন কাপড়টা কিসের সাথে বাঁধা থাকত। ততদিনে আমরা শিউর হয়ে যাই যে কাপড়গুলো হল সাম ফর্ম অফ পার্টিশন – যখন ওই বন্দিশালায় বন্দী সংখ্যা এত বেশি হয়ে যেত যে সেলে আর ধরত না, তখন এই পার্টিশন ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষ টেম্পোরারি সেল বানাত।

তা কেমন ছিল এই পার্টিশনাবৃত জীবন? মনে আছে একবার বলেছিলাম এক বন্দীর কথা যাকে মাসের পর মাস "এমন এক স্থানে" হাত পিছে বেঁধে রাখা হয় যে সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়? পরবর্তীতে সেলে নিয়ে আসলে, আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে কোন মেয়েকে ভাল লাগে, ছাড়া পেলে তাকে বিয়ে করবে এই আলোচনা করে সহবন্দীদের সাথে? এবং যে পরবর্তীতে আর ফিরে আসে নাই শুনে আমি অনেক কেঁদেছিলাম? যাহোক ওই বন্দীর "এমন এক স্থান" ছিল এই কাপড়ওয়ালা পার্টিশন পরিবেষ্টিত স্থানে।

তখন থেকেই আমার খুব কৌতূহল ছিল জানার কতটুকু জায়গা ছিল এই পার্টিশনের ভেতরে যে একটা মানুষকে হাত পিছে বেঁধে ওখানে কয়েক মাস নিশ্চুপ ফেলে রাখলে সে পাগল হয়ে যেত? ফেলেই বা রাখত কেন? দাঁড়াতে দিলে কী হত? সেলে তো বন্দীরা দাঁড়াত। এখানে না কেন? খানিকটা অনুমান করলেও, শিউর হতে পারতাম না।

টুডে আওয়ার টিম ফাউন্ড দ্য পার্টিশনস!! স্থান-রং থেকে শুরু করে আমরা যা যা অনুমান করেছিলাম, তা হুবহু মিলে গিয়েছে! আমরা এখন জানি পার্টিশনের ভেতরে স্থান ছিল আড়াই ফিট বাই পাঁচ ফিট। আর উচ্চতা ছিল মাত্র পাঁচ ফিট। এই কারণে সেলে দাঁড়ালেও, এখানে দাঁড়ানো নিষেধ ছিল। পার্টিশনের ওপর দিয়ে সব দেখা যাবে তো। ইটস আ লজিস্টিকাল ইস্যু।

কমিশনে আমরা শুক্র-শনি, রাত-দিন ভুলে রেকলেসলি কাজ করি আসলে এই সব মুহূর্তগুলোর জন্য। মনে অনেক প্রশ্ন জমে থাকে। অনেক ক্ষোভ দানা বাঁধে, অনেএএএএএএক ক্ষোভ। তারপর হঠাৎ হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য হলেও ডটগুলো মিলে, মিস্ট্রিগুলো সল্ভ হয়। যেটার ওপর ভর করে পরবর্তী স্টেশনে পৌঁছাই।