মো. জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা সৈয়দপুরের পিডাব্লিউ অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) কার্যালয়ের স্টোর (গুদাম) থেকে দুই পিক-আপ রেললাইন পাচার করা হয়েছে। গ্যাস দিয়ে কেটে লাইনগুলো টুকরো টুকরো করে বিক্রি করেছেন ওই অফিসের ইনচার্জ সুলতান মৃধা।

সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, স্টোরে বা অফিস ইয়ার্ড চত্বরে গ্যাস দিয়ে রেললাইন কাটার কোন নিয়ম নাই। বিশেষ প্রয়োজনে কাটতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে কাজটা সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া সব সময় ব্লেড দিয়ে কাটতে হবে। শুধুমাত্র রেল ট্র্যাকে (ট্রাফিক লাইন) সংষ্কার কাজ করাকালে অনুমতি সাপেক্ষে গ্যাস ব্যবহার করে কাটা যাবে। তথ্যদাতার অভিযোগ, এই নিয়ম উপেক্ষা করে এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির তোয়াক্কা না করে বাহির থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে এসে সারারাত রেললাইন কাটা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় কয়েকজন বহিরাগত, অফিস স্টাফ ও ক্রেতার লোকজন। রাতভর বৃষ্টি সুযোগে এই কাজ করে ভোরে পিক-আপ লোড করে পাচার সম্পন্ন করা হয়েছে।

অভিযোগ পেয়ে সকাল ১০টায় সংবাদ কর্মী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় দেখা যায় ইয়ার্ডে রাখা রেললাইনের কয়েকটিতে গ্যাস দিয়ে কাটার চিহ্ন বিদ্যমান। এমনকি কাটার সময় বের হওয়া লোহার গুড়ো বা আকরিকের অংশ পাওয়া গেছে। এছাড়া উপস্থিত সকলের দাবির প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে স্টোরের তালা খুলেন ইনচার্জ। এতে দেখা যায়, স্টোরেও লাইনগুলো গ্যাস দিয়ে সদ্য কেটে টুকরো টুকরো করে রাখা হয়েছে। পাশেই তিনটি গ্যাস সিলেন্ডার ও লাইন কাটার সরঞ্জামও বিদ্যমান। এসময় আরএনবি সদস্য সাদ্দাম হোসেন জানতে এখানে গ্যাস সিলিন্ডার কেন? আর লাইনগুলো এভাবে কাটা কেন?

এর প্রেক্ষিতে অফিস ইনচার্জ সুলতান মৃধা বলেন, কাজের সুবিধার্থে নিয়ম না থাকলেও গ্যাস দিয়ে রেললাইন কাটা হয়েছে এবং স্টোরে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি। আর লাইন পাচার করার বিষয়টি সঠিক নয়। এতে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করলে তিনি সোহাগ নামে এক বহিরাগত যুবককে ডেকে এনে বাগাড়ম্বর করেন।

এ ব্যাপারে এই অফিসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পার্বতীপুর রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, স্টোরে বা ইয়ার্ডে রেললাইন কাটার কোন নিয়ম নাই। তাছাড়া গ্যাস ব্যবহার কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে গ্যাস সিলিন্ডার রাখাও বৈধ নয়। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। সব দায়িত্ব ইনচার্জের।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, পিডাব্লিউ এর ওই ইনচার্জের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনেক অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আপনারা তাকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেন। তাহলে বেশ উপকৃত হতাম। এমন জনবল রেলওয়ের জন্য ক্ষতিকর।

রাজশাহীস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্রাক) আহসান জাবির মুঠোফোনে বলেন, তথ্য প্রমাণ থাকলে আপনারা নিউজ করেন। তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।