কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক কারবারির অভিযোগ এনে মা-মেয়ে ছেলেসহ পরিবারের তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মুরাদনগর উপজেলাধীন বাংগরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজন জানান, আগের দিন সন্ধ্যায় এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়ে সকালে তাদের একজনকে কুপিয়ে এবং দুই জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। গণপিটুনিতে আরো একজন গুরুতর আহত হয়েছে। নিহতরা হচ্ছেন-কড়ইবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি(৫৫), তার পুত্র রাসেল মিয়া (২৮), মেয়ে জোনাকি আক্তার (২২)। এছাড়াও গণপিটুনিতে একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নাজির আহম্মেদ খান। তিনি বলেন, “আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
পুলিশ সুপার আরো জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে এবং আহত একজনকে হাসপাতালে পাঠায়। তিনি আরও বলেন, “কোনো অপরাধী থাকলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে।”
নিহত রাসেল মিয়ার স্ত্রী মীম আক্তার বলেন, পরশুদিন (১জুলাই) একটি মোবাইল চুরির ঘটনায় এক ছেলেকে সারারাত ধরে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় চোরের বাবা আমার শাশুরী কাছে অনুরোধ নিয়ে আসছে চোরকে ছাড়িয়ে আনতে। আমার শাশুরি এ অনুরোধ নিয়ে গেলে বাছির গংরা আমার শাশুরীকে মারধর করে। এ খবর শুনে আমার স্বামী রাসেল মিয়া সেখানে যায়। সেখানে রাসেল এর সাথে বাকবিতন্ডার এক রাসেলের দোকানের কর্মচারীরা ওই ছেলেকে মারধর করে। পরে এ নিয়ে বিচার শালিশী হয়। গতকাল বুধবার রাতে বাছির গংদের আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আজ সকালে আমি ও আমার স্বামী আমার বাবার বাড়িতে ছিলাম। আেমার শাশুরীকে মেরে ফেলতে খবর পেয়ে স্বামী বাড়িতে ছুটে আসলে তাকেও কুপিয়ে মেরে ফেলে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নিহত পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকা- ও চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। প্রশাসনের নজরে আনা হলেও দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। ক্ষোভ ও উত্তেজনার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, নিহতরা এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে মুরাদনগর, নবীনগর ও বাঙ্গরা বাজার থানায় মাদক, ডাকাতি ও সন্ত্রাসসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শনাক্তে অভিযান চলছে। তবে এখনও কোনো মামলা হয়নি। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার পর করইবাড়ী গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।