পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আজিম উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। দুই মাস আগে গত ২৩ আগস্ট তাঁকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি ও মাদকের মামলায় গ্রেফতার করে আনোয়ারা থানা-পুলিশ। পরে এ মামলায় তিনি জামিনে বের হয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন।

আজিম উদ্দিন (২৬) উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আজিম তৃতীয়। পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজিম পঞ্চম শ্রেণির বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি।

স্থানীয় সুত্রগুলো জানাায়, আজিম উদ্দিন এর আগে দুটি বিয়ে করেছিলেন। দুজনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। দুই বছর আগে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আন্ধারমানিক এলাকার বৃষ্টিকে বিয়ে করেন। এরপর আর এলাকায় খুব একটা আসেননি।

পুলিশ জানায়, আজিম ও বৃষ্টি দুজনেই পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত। গত সোমবার বান্দরবান থেকে এ দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাঁদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয়। পরবর্তী সময়ে এক বছরে তাঁদের প্রকাশিত মোট ১১২টি ভিডিও ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে।

সুত্র জানায়, আজিমের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন সচ্ছল নয়। তাঁর বাবা আবুল কালাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তবে বেশির ভাগ সময় তিনি গ্রামে থাকেন না। আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গেও তাঁরা তেমন কথা বলেন না। বাড়িতে মাঝেমধ্যে থাকেন।

বরুমচড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আজিমের পরিবারে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার কথা আমরা জানতাম। তবে এখন যে অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনেছি, তা দেখে স্তম্ভিত হয়েছি।

আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন,গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হওয়ার পর আমরা আজিম ও তাঁর ভাইকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তখন লোকজনের মুখে আজিম দম্পতি পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা শুনেছিলাম। তবে আমরা কোনো আলামত পাইনি।

যুগল রিমান্ডে: নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফি তৈরি করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় মোহাম্মদ আজিম (২৮) ও বৃষ্টিকে (২৮) ৫ দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালত এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন জানান, তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি নিয়ে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মামলার বাদী শামীম হোসেন পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এ মাসের ১৭ তারিখে ডিসেন্ট নামে এক গণমাধ্যমে সংবাদ হয়, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশি যুগল যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্ন তারকা। সেখানে দেখা যায় একটি চক্র বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করে সেগুলো অনলাইনে বিভিন্ন পর্ণ সাইটে আপলোড করে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে সাধারণ ছেলে মেয়েদের যৌনক্রিয়া ও পর্নোগ্রাফি উৎপাদনে আকৃষ্ট করছে। আসামীদের সৃষ্টি করা অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের তৈরি করা শতাধিক পর্নোগ্রাফি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। সংবাদটি পর্যালোচনা করে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মুহাম্মদ আজিম ও বৃষ্টিকে সনাক্ত করতে সক্ষম হন মামলার বাদী। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আসামীদের ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম ও টেলিগ্রাম আইডি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা অন্যান্য সহযোগিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফি তৈরি করে সেগুলো অনলাইনে বিভিন্ন পর্ণ ওয়েবসাইটে আপলোড করে এবং একইসঙ্গে সাধারণ ছেলে মেয়েদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফি তৈরিতে আহ্বান জানান।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আসামীদের সম্পৃক্ততা আছে ও আসামীদের কাছ থেকে আরও তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করা যাবে। এসবের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামীদের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যাবে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।