২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দুর্নীতির হার কমলেও এখনো চলমান বলে জানিয়েছেন বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের টিআইবি কার্যালয়ে বাংলাদেশে তার সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা কোথায় গেছে তা চিহ্নিত করে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চালানো জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এখনও দুর্নীতি চলছে, তবে জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর এটি কমেছে। টিআইবি, টিআই ইউকে সহযোগিতার ভিত্তিতে ইউকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে। ইতোমধ্যে অনেকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত ১৫ বছরে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে জাতীয় আয় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তো। দুর্নীতিকে সফল করতে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, টাকা পাচারের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে টাকা পাচার কিছুটা কমেছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার হয়েছে। টাকা পাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে এটা বলা যাবে না। একবার পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা অত্যন্ত কঠিন। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উপায় বের করতে হবে। এজন্য পাচার প্রতিরোধে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়ায় আগের চেয়ে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে। যারা এগুলো করতো তারা বিদেশে পলাতক, বিচারে আছে। ব্যাংকিং সেক্টরে পাচার নিয়ন্ত্রণ হওয়ার দিকে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে বছরে যে পরিমাণ বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগ আসে, গত সময়ে তার দ্বিগুণেরও বেশি টাকা পাচার হয়েছে। তাই তা বন্ধ করতে হবে এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। কিছু সাফল্যও এসেছে, যেমন যুক্তরাজ্যে কিছু সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, টিআই চেয়ারপার্সন বিডি চ্যাপ্টার সম্পর্কে জানার জন্য এসেছেন। বাংলাদেশ পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সেটা জানার সুযোগ হচ্ছে। অর্থপাচার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছেন টিআই চেয়ার।
বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন।
২০২৩ সালে টিআই পরিচালনা পর্ষদের চেয়ার নির্বাচিত হওয়ার পর এটি তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। একশটিরও বেশি দেশের জাতীয় চ্যাপ্টারের মাধ্যমে কর্মরত বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী কোয়ালিশন টিআইয়ের সর্ববৃহৎ ও অন্যতম সক্রিয় চ্যাপ্টার হিসেবে স্বীকৃত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময়, টিআইবির কার্যক্রম, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বিনিময় তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য।
তিনদিনের সফরে টিআইবির কর্মী, টিআইবির উদ্যোগে দেশের ৪৫টি অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি, তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ৬৫টি ইয়ুথ অ্যানগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পাশাপাশি, তিনি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট অংশীজন, নাগরিক সমাজ সদস্য এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।