ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা : ছাতক সিমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডের পুরনো (স্ক্যাপ) মালামাল বিক্রয় পুনঃ দরপত্রের ব্যাংক কর্তৃক পে-অর্ডার দাখিলে বড় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। দরপত্রে ‘বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানটি ৭৫ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৬শ’ টাকার পে-অর্ডারকে ঘষামাজা করে ৬ কোটি পে-অর্ডার বানিয়ে দরপত্রের সাথে দাখিল করেছেন। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক ভুয়া পে-অর্ডার দাখিলের এমন জালিয়াতির ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে।

জানা যায়, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানীর পুরাতন ওয়েট প্রসেস কারখানার অব্যবহৃত অকেজো চিহ্নিত বিভিন্ন স্থাপনাসহ স্ক্যাপ মালামাল ১ (এক) লটে (যেখানে যে অবস্থায় আছে) তা বিক্রয়ের দরপত্র প্রকাশ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কারখানা থেকে ৫৭টি দরপত্র বিক্রয় করা হয়। রোববার দরপত্র দাখিলে শেষ দিনে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানীর বিভাগীয় প্রধান (বাণিজ্যিক) এর কার্যালয়, নেজারত শাখা, সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিলেটের গণপূর্ত বিভাগ কার্যালয়ে দরপত্র গ্রহণ করা হয়। দরপত্র আহ্বানের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ৮টি প্রতিষ্ঠান তাদের দরপত্র দাখিল করেছেন। অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হয়।

দরপত্রে অংশ গ্রহণকারী ৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রথম দরদাতা নির্বাচিত হন, বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ ৭৫ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর উল্লেখ করে। দ্বিতীয় দরদাতা নির্বাচিত হয় বিছমিল্লাহ-সোনালী চেলা ইঞ্জিনিয়ারিং দর ৭১ কোটি ১ লাখ টাকা। ৩য় দরদাতা নির্বাচিত হয়েছেন ‘মেসার্স মো. রাকিব হাসান’ দর দাখিল করেন ৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ৪র্থ দরদাতা হলেন ‘কর্ণফুলী রিভার্স ট্রান্সপোর্ট’ দর দাখিল করেন ৬৩ কোটি ১৬ লাখ ৫শ’৫৫ টাকা। সর্বোচ্চ দরদাতা বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের দরপত্রের সাথে জমাকৃত এনআরবিসি ব্যাংক কর্তৃক পে-অর্ডারের মূল্য সঠিক থাকলেও পে-অর্ডার ঘষামাজা থাকায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে দরপত্র পরিচালনা কমিটির কাছে তাৎক্ষণিকভাবে মেসার্স বিছমিল্লাহ-সোনালী চেলা ইঞ্জিনিয়ারিং এর পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভুয়া পে-আর্ডারটি বিষয়ে জানতে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকাবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও প্রতিষ্ঠানের ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, পে-অর্ডার জালিয়াতির খবরটি প্রচারের পর তিনি গা-ডাকা দিয়েছেন।

ভুয়া পে-অর্ডার দাখিলের বিষয়ে জানতে চাইলে এরআরবিসি ব্যাংক এর ব্যবস্থাপক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, দরপত্রের সাথে দাখিলকৃত ভুয়া পে-অর্ডারটির বিষয়ে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমার সাথে কথা বলেছেন। গত ২১ মে আমির আলী নামে এক ব্যক্তি আমাদের ব্যাংক থেকে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানীর দরপত্রের অংশ নেওয়ার জন্য ৬শ’ টাকার একটি পে-অর্ডার নিয়েছেন, এটি ৬ কোটি টাকার কিভাবে হলো আমারও জানা নেই। এবিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, দরপত্রের কাগজপত্রের সাথে দাখিল করা পে-আর্ডারটি ভুয়া বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অন্য দরপত্রের কাগজপত্রও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। লিখিতভাবে পে-অর্ডার জালিয়াতির বিষয়টি জানানোর পর বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের দরপত্র বাতিল করা হবে এবং এর পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।