সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ‘মুজিববর্ষ’ পালন, শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণে অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল বুধবার দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, সাত সদস্যের একটি কমিটি এই অনুসন্ধান করছে। গত জানুয়ারি মাসে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দুদকের অনুসন্ধান দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। দলে আরও রয়েছেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

অনুসন্ধান দলকে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিমালা ও কমিশনের জারি করা সার্কুলার অনুসরণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের সময় কোনো ব্যাংক হিসাব জব্দ বা সম্পত্তি ক্রোকের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ১০ পৃষ্ঠার কাগজপত্র অনুসন্ধান দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গত বছরের নবেম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে ঘোষিত মুজিববর্ষে কী ধরনের কাজ হয়েছে, কত টাকা অপচয় হয়েছে, সে বিষয়ে ডকুমেন্টেশন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল উপদেষ্টা পরিষদ।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তবে কোভিড মহামারীর কারণে মুজিববর্ষের সময়কাল বাড়ানো হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আরও ১৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ একটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।

সংস্থার উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম এনসিসি ব্যাংকে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রের নামে থাকা এই ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের অর্থ অন্যত্র ‘হস্তান্তর বা স্থানান্তরের’ চেষ্টা করছেন। সে কারণে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের এই হিসাবটি অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন মনে করছে দুদক।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার আগে ১১ মার্চ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দলের নামে যে ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন একই আদালত। এসব হিসাবে অবরুদ্ধ টাকার পরিমাণ ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে ৩২টি হিসাবে রয়েছে ৪৭৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ২৬৪ টাকা। সেদিন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ থাকায় গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছ আদালত। অন্যরা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার তিন ছেলেমেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। এর আগে গত ১৮ মার্চ শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ৩১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব হিসাবে ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ ৭২ হাজার ৮০৫ টাকা রয়েছে।

চ-১(অ) ০৯-০৪-২০২৫.ফড়প

সালমান আমু মেননসহ নতুন

মামলায় গ্রেফতার ১০

স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর বিভিন্ন থানার পৃথক মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অভিনেত্রী শমী কায়সারসহ ১০ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত। অন্যরা হলেন-ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক এমপি হাজী সেলিম, সাদেক খান, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এদিন সকাল ৯ টায় ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় তাদের হাজির করে পুলিশ। ১০ টা ১৫ মিনিটে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেফতার দেখানো আবেদন করে। পরে বিচারক সেটি মঞ্জুর করেন। যাত্রাবাড়ী থানার সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলায় আমীর হোসেন আমু, সালমান এফ রহমান, ডা. দীপু মনি, শহীদুল হক, হাজী সেলিম, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার দেখায় আদালত।

এছাড়া শাহবাগ থানার মনির হোসেন হত্যা মামলায় রাশেদ খান মেনন, ভাটারা থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব, মোহাম্মদ থানার মামলায় সাদেক খান, উত্তরা পূর্ব থানার জুবায়ের ইউসুফ হত্যাচেষ্টা মামলায় শমী কায়সারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সালমান এফ রহমানসহ ৬ জনকে গ্রেফতার দেখানোর মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ২১ জুলাই দুপুর আড়াইটায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন ফুটওভার ব্রিজ নিচে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন সাজেদুর রহমান ওমর। পরে বিকালে আসামিদের আক্রমণে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান। এ ঘটনায় এ বছরের ৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়।