DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

অপরাধ

যেকারণে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে খুন করা হয়েছে

যখন নবদম্পতি পালিয়ে বিয়ে করে ঢাকায় আসে। তারা নীলফামারী থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় আসার পর তাদের অর্থ হারিয়ে যায়। সাইফুর রহমান তাদের সঙ্গে দেখা করেন কমলাপুর রেলস্টেশনে।

অনলাইন ডেস্ক
habibullah-bahar_20250312_074708450

মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ। রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাসায় আশ্রয় নেওয়া নবদম্পতিকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন, জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ ঘটনার সূত্রপাত গত এক সপ্তাহ আগে, যখন নবদম্পতি পালিয়ে বিয়ে করে ঢাকায় আসে। তারা নীলফামারী থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় আসার পর তাদের অর্থ হারিয়ে যায়। সাইফুর রহমান তাদের সঙ্গে দেখা করেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। তরুণী ব্যাগ হারিয়ে ফেলার কথা বলে কান্না শুরু করলে, সাইফুর তাদের কাছে শুনতে পান যে, তাদের টাকাপয়সা সব চুরি হয়ে গেছে এবং ঢাকায় কোনো আশ্রয় নেই। এর পর সাইফুর রহমান তাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাদের বাসায় নিয়ে আসেন।

এ সময়ে সাইফুর রহমান তরুণীকে কাজ দেওয়ার এবং তরুণকে গাড়ি চালানোর কথা বলেন। সাইফুর তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবেন এমন আশ্বাস দিলেও, নবদম্পতি তার বাসায় কিছুদিনের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব করেন এবং শারীরিক, মানসিক অত্যাচারের শিকার হতে থাকেন।

১০ দিনের মাথায়, সোমবার গভীর রাতে, সাইফুর রহমানের সঙ্গে নবদম্পতির মধ্যে ঝগড়া শুরু হয় এবং একপর্যায়ে ছেলেটি সাইফুর রহমানকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে, তাদের পলায়নের সময় সাইফুর রহমানের মোবাইল ফোন এবং বাসার চাবি তারা নিয়ে পালিয়ে যান।

প্রতিবেশীরা জানান, সোমবার ভোরে সাইফুর রহমান বাসার টয়লেটের জানালা থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন। তাদের চিৎকার শুনে কিছু প্রতিবেশী এগিয়ে যান এবং ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে সাইফুর রহমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, সাইফুর রহমানের ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ভূঁইয়া এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তরখান থানায় একটি মামলা করেছেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, সাইফুর রহমান কিছুদিন আগে উত্তরখান এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেছিলেন এবং তার স্ত্রীর পৈত্রিক জমির পাশে ওই বাসাটি ভাড়া নেন।

তিনি আরো জানিয়েছেন, সাইফুর রহমান ওই নবদম্পতিকে প্রতিবেশীদের কাছে ‘ভাবি’ এবং ‘ভাতিজা’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

পুলিশ জানায়, সাইফুর রহমানের সঙ্গে নবদম্পতির সম্পর্ক ছিল খুবই সন্দেহজনক। তদন্তের সূত্রে জানা যায়, নবদম্পতি গত ৭ মার্চ পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। সাইফুর রহমানের বাসায় বসবাসের সময় নবদম্পতির মধ্যে অস্বস্তি এবং ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে, বিশেষ করে সাইফুর রহমান তরুণীকে শারীরিকভাবে বিরক্ত করতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে, সোমবার রাতে, সাইফুর রহমান এবং নবদম্পতির মধ্যে তীব্র ঝগড়া শুরু হয়, এবং এর পরই ছেলেটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাইফুর রহমানকে আঘাত করেন। পরবর্তীতে, তারা বাসা থেকে পালিয়ে যান এবং সাইফুর রহমানের মোবাইল ফোন ও বাসার চাবি নিয়ে চলে যান।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। সাইফুর রহমানের শারীরিক আচরণ, নবদম্পতির ক্ষোভ, এবং বাসায় তাদের বন্দি করা—এসব বিষয়ের সম্মিলিত প্রভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন। তবে এখনো হত্যার মূল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

এদিকে, সাইফুর রহমানের পরিবার জানায়, সাইফুর তার স্ত্রীর সাথে শান্তিনগরে থাকতেন এবং মাঝেমধ্যে উত্তরখানে ভাড়া বাসায় আসতেন। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান শান্তিনগরের বাসায় থাকেন, আর সাইফুর রহমান কখনো তাদের কাছে ফিরে আসতেন, কখনো আবার চলে যেতেন।

এ ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছে। পুলিশ জানায়, নবদম্পতি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন এবং এখন তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সাইফুর রহমানের সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা তার মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং তার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। তদন্ত চলমান থাকায়, বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।