দীর্ঘ ৮ বছর পর ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল রহস্য উৎঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি)। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় স্ত্রী এবং নিহতের ভাইসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪২), নিহতের ভাই জসিম উদ্দিন (৫২) এবং আরেকজন সিএনজি ড্রাইভার আবুল কালাম (৪৭)। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৪ মে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির নাম নাজিম উদ্দিন (৫৪)।
মঙ্গলবার (৬ মে) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান জানান, নিহত নাজিম উদ্দিন (৫৪) প্রবাসী ছিলেন। ২০১৬ সালের শেষ দিকে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেয়ে পরিবারের কাউকে না বলে বিদেশ হতে চলে আসেন। ছেলের নিখোঁজের বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হত। ২০১৭ সালের মে মাসের দিকে দুপুর ১২ টার দিকে, মুদি বাজার করা ও বিভিন্ন সংস্থা হতে ঋণ নেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে নাজিম উদ্দিন তার স্ত্রীকে থাপ্পড় মারলে তার স্ত্রী আসামী নাছিমা আক্তার পেছনে সরে গিয়ে স্বামীকে দুই হাত দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে নাজিম উদ্দিনের মাথা পেছনের দরজার চৌকাঠের লোহায় লেগে অচৈতন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ভিকটিম নাজিম উদ্দিনের মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ঝরতে থাকে। স্বামীর সাড়া শব্দ না পেয়ে আসামী নাছিমা আক্তার তাহার হাতের শিরা ও বুকে কান পেতে হৃদস্পন্দন না থাকায় নিশ্চিত হয় যে ভিকটিম মারা গেছে। স্ত্রী নাছিমা আক্তার কাউকে কিছু না জানিয়ে লাশটি ঘরের এক কোণে মালামাল ও মুরগির খাবার রাখার জায়গায় কম্বল ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রাখে। ঘটনার দিন নাজিম উদ্দিনের ২ মেয়ে স্কুলে ছিলো।
মেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে আসার পূর্বেই আসামী নাছিমা আক্তার ঘরের ফ্লোরে পড়া রক্ত ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে পাসপোর্ট এবং বিদেশের আইডি কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র ছিড়েঁ আগুনে পুড়ে ফেলে। মেয়েরা স্কুল থেকে এসে তাদের পিতার কথা জিজ্ঞেস করলে নাছিমা আক্তার তাদের জানায়, তোমাদের আব্বা আমার সাথে ঝগড়া করে বিদেশে চলে গেছে। আসামী এলাকায় প্রচার করে যে, তার স্বামী বিদেশে চলে গেছে। আসামী নাছিমা আক্তার প্রায় ৭ (সাত) দিন মালামাল ও মুরগির খাবার রাখার ঘরে ভিকটিম মৃত নাজিম উদ্দিনের মৃতদেহ বিভিন্ন সুগন্ধি ব্যবহার করে লুকিয়ে রাখে। সাতদিন জসিম উদ্দিন ও আসামী সিএনজি ড্রাইভার আবুল কালামের যোগসাজশে মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে অপরাপর সন্ধিগ্ধ আসামীদের সহায়তায় লাশটি মুরগির খাবারের বস্তায় ভরে তার বসত বাড়ি হতে অনুমান ১০০ গজ দূরে দক্ষিন সর্ত্বা এলাকায় জনৈক ফজল করিম মেম্বারের মজা পুকুরে ফেলে দেয়।
পরবর্তীতে প্রায় দুই মাস পর ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই স্থানীয় লোকজন পুকুরে দুর্গন্ধযুক্ত একটি বস্তা ভাসতে দেখে কুকুরের মৃতদেহভর্তি বস্তা মনে করে পুকুর থেকে তুলে পুকুরের পার্শ্ববর্তী ঝোপ-জঙ্গলের একটি গর্তে ফেলে দেয়। পরে কাক বস্তা ছিঁড়ে ফেললে মানুষের হাড় বেরিয়ে আসে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে পঁচাগলা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রেরণ করে। লাশটি কেউ সনাক্ত করতে না পারায় আনজুমানে মফিদুল ইসলাম,চট্টগ্রামের মাধ্যমে লাশ দাফন করা হয়। পরদিন ১৯ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে রাউজান থানার মামলা করে।
এদিকে এই সংবাদ পেয়ে ১৯ জুলাই নিহত নাজিম উদ্দিনের ভাই জসিম উদ্দিন (লা শ গায়ে করায় অভিযুক্ত) তার ভাই নিখোঁজ হয়েছে মর্মে রাউজান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। উক্ত নিখোঁজ ডাইরীর সূত্র ধরে সেই বছরই সিআইডি, চট্টগ্রাম নিহতের পরিচয় সনাক্তের জন্য নাজিম উদ্দিনের ভাই জসিম উদ্দিন, স্ত্রী নাছিমা আক্তার এবং মেয়ে ইসরাত জাহানের ডিএনএ ম্যাচিং পরীক্ষা করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় অজ্ঞাতনামা লাশটি ভিকটিম মৃত নাজিম উদ্দিনের মর্মে সনাক্ত হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়নি। কে বা কারা ঠিক কী কারণে ভিকটিম নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করেছে সম্প্রতি সিআইডি এর রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে।