দেশে বিদেশে আলোচিত সিলেটের সাদা সোনা নামে খ্যাত কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর ব্যাপক হারে উদ্ধার হচ্ছে, তদন্তও চলছে বিরামহীন। তদন্তে সঠিক রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তারা গত রোববার আরো তিন দিনের সময় চেয়ে নিয়েছে। কিন্তু পাথর লুটের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত রাঘব-বোয়ালরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। যৌথ বাহিনী বলেন আর জেলা পুলিশ বলেন কেউই এখনও প্রভাবশালী সাদাপাথর লুটকারী সিন্ডিকেটের কোন হোতাকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে সিলেটবাসীর মধ্যে জমছে ক্ষোভ, উদ্ব্যেগ আর উৎকণ্ঠা।
সিলেটের আলোচিত সাদাপাথর লুটের ঘটনায় পাঁচ দিনে প্রায় ৪ লাখেরও বেশি ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। আটক করা হয়েছে ৬ জনকে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে পাথর কেলেংকারীর ঘটনায় তাহার সভাপতির পদ স্থগিত করেছে বিএনপি’র হাই কমান্ড। এছাড়া আর কোন কৃতিত্ব নেই রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে। তবে মামলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামী করা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। আর এই মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিক। যারা দিনে আনে দিনে খায় এই পাথর শ্রমিকরা মামলার ভয়ে রাতের বেলা বাসা বাড়িতে থাকতে পারছেন না, দিনের বেলায় কর্মস্থলেও যেতে পারছেন না। এ নিয়ে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। যেকোন সময় এই ব্যাপারে আন্দোলনের ডাক আসতে পারে। অভিযোগ উঠেছে আসল হোতাদের ধরা হচ্ছে না, বরং সাধারণ দিনমজুরদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার অভিযোগ, প্রকৃত লুটেরাদের আইনের আওতায় না এনে প্রশাসন উল্টো শ্রমজীবী মানুষদের হয়রানি করছে। যাদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তারা মূলত চুনোপুঁটি, অথচ রাঘববোয়ালরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
জানা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাটের জাফলংসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাট চলে আসছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরপর শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। হাইকোর্টে রিট হয়। লুটেরাদের তালিকাও চান বিজ্ঞ আদালত। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার এবং অন্তত ৫০টি নৌকা ধ্বংস করা হয়।
ঘটনার তদন্তে গত ১২ আগস্ট সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও তিনদিন সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন আগামীকাল বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
কমিটির অন্যতম সদস্য পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারি পরিচালক আফজালুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, গত রোববার রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা থাকলেও আমাদের আরও কয়েকদিন সময় প্রয়োজন। সময় বৃদ্ধির আবেদন করায় তা মঞ্জুর হয়েছে এবং আগামীকাল বুধবার আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিবো।
উল্লেখ্য, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১ থেকে দেড় হাজার জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। তবে অনেকেই বলছেন, এভাবে অজ্ঞাত হাজারো আসামী দেখিয়ে মূল হোতাদের আড়াল করা হচ্ছে।