যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মধ্যপাড়াতে জোরপূর্বক বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পেও বসাবসি হয়। তারা একমাস সময় চেয়ে নিছিলো, তার পরেও বাড়ি থেকে সরতে চাইছে না। বাড়ির মালিক জামায়াত সমর্থক হওয়ায় আওয়ামীলীগ আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভাড়া দেয়নি দশ বছর। এখন ভোল পাল্টিয়ে অন্য একটি দলের ছত্র-ছায়ায় সুবিধা নিতে চায় বলে আভিয়োগ করেছেন বাড়ির মালিক খবির খাঁ।

স্থানীয়রা জানান, দখলদাদের উচ্চেদ করতে জমির মালিক কয়েক দফা উকিল নোটিশ, ইউনিয়ার পরিষদে দখলদার উচ্ছেদের জন্য আবেদন করেও কোন ফল পাননি। সরকার পরিবর্তনের পর দখলদারদের উচ্চেদ করতে আইনশৃঙ্গলা বাহিনীকে জানিয়েছেন তিনি। উভয় পক্ষ কয়েক দফা বসেছেন। আপোসের মাধ্যমে ফ্রেরুয়ারি মাসে বাড়ি ছেড়ে দেবে বলে জানায়। নির্দিষ্ট সময়ের বাড়ি না ছেড়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর দোষ চাপিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিয়োগ উঠেছে।

স্থানীয়দের অনেকেই জানান, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে দখল ও উচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গোলযোগ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ১/১১ পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর থেকে ভাড়াটিয়া ১২ পরিবার বাড়ির মালিককে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ভাড়াটিয়া ও মালিকের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বাড়ির মালিক খবির খাঁ জামায়াতের সমর্থিত হওয়ায় আওয়ামী শাসন আমলে তিনি কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

জমির মালিক খবির খান বলেন, যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মৌজার ১৯৬.১৯৭ দাগে মোট ৩০ শতক জমি শাহেদ বকসের কাছ থেকে ক্রয় করেন। বি আর এস রের্কাড তার নামে হয়েছে। জমির নিয়মিত খাজনা তিনি পরিশোধ করে থাকেন। এ জমি নিয়ে আদালতে কোন মামলা নেই বলে জানান তিনি।

খবির খানের ছেলে আসলাম খান জানান, ১৯৬, ১৯৭ দাগের মোট ৩০ শতক জমিতে টিন সেডের ঘর নির্মাণ করে তাদেরকে ভাড়া দেওয়া হয়। শুরুতে ভাড়াটিয়ারা সঠিকভাবে ভাড়ার টাকা পরিশোধ এবং রশিদ নিয়েছেন। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ভাড়াটিয়ারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ১০ রছর ধরে ভাড়ার টাকা দেয় নাই। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছে। সে সময় ভাড়াটিয়ারা বলতো, ‘আমরা কোনদিন তোর ভাড়ার টাকা দেব না। আর যদি কোনদিন ভাড়ার টাকা চাইতে আছিস তা হলে জামায়াত শিবির বলে জঙ্গি মামলা দিয়া ঘর ছাড়া করবো। তোকে ও তোর ছেলেমেয়েদেরকে জানে শেষ করে দেব।

এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর তাদেরকে দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেন খবিবর খান। কিন্তু তারা দখল ছাড়তে চায় না। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটিও হয়। খবিবর খা, ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ করতে বিরোধে না গিয়ে আইনানুয়ায়ী আইনজীবীর মাধ্যকে ভাড়াটিয়া চান্দু, আয়নাল হক, ইসমাইল, কাল্লা (কালু), আবু জাফর, বাদশা, রাজুসহ ১২ জনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। তার পরেও তারা ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দেয়নি। পরে তিনি কোতয়ারী থানায় অবৈধ ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন।

খবিবর খান জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর পুলেরহাটস্থ অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে তার অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি হয়। এ সময় ভাড়াটিয়ারা উপস্থিত ছিলেন। জমির কাগজপত্র যাচাই শেষে ভাড়াটিয়াদের ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে জমির দখল ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা তা না করে জোর পূর্বক বাড়ি দখল করে রাখে।

তিনি আরও জানান, গত ১৩ এপিল সকালে পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি পাশে বেড়া তৈরি করতে গেলে ভাড়াটিয়ারা বাধা দেয়ে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় ভাড়াটিয়ারা নিজেরাই ঘরবাড়ি ভাংচুর করে আমার সম্পাদ নষ্ট করে আবার উল্টো আমার নামে মামলা দিয়েছে। এখন আবার তারা বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দেয়ার চেষ্টা করছে।

ঘরবাড়ি ভাংচুরের বিষয় তিনি বলেন, আমার বাড়ি আমি কেন ভাংচুর করবো। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়ারা আমার সম্পাদ নষ্ট করে আবার আমার নামে মামলা দিয়েছে।

এদিকে ভাড়াটিয়া মিলন, সালমা খাতুন শফিকুল ইসলাম বলেন, খবির খা আমাদের উপর হামলা, বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। তবে তারা স্বীকার করেন যে, এ জমি তাদের না। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভাড়া নয়, ফ্রি বসবাস করছেন।

ভাড়াটিয়া ইজিবাইক চালক মিলন হোসেন বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই যশোর কোতোয়ালী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে বাড়ির মালিক খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন, আসলামসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে এই হামলার অভিযুক্ত করা হয়েছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা শরিফুল ইসলামের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে যশোর জেলা জামায়াত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন । বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা শাখার আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, বলেন বাড়ির মালিক খবির খান জামায়াতের কোন কর্মী বা নেতা নন। এ ঘটনাটি খবির খানের ব্যক্তিগত জমি-জায়গা সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিষয়। এর সাথে জামায়াতের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এসময় তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দীকী, সহকারী সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দস, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন আমীর হাফেজ মাওঃ আশরাফুল ইসলাম সহ স্থানীয় জামায়াত নেতা কর্মীরা ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন তাদের সার্বিক খোজ খবর নেন। এই ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ৪০০০/- (চার হাজার) করে মোট ৬০,০০০/- (ষাট হাজার) টাকা নগদ প্রদান করেন। উক্ত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি বিশেষ মহল অপতৎপরতায় লিপ্ত আছে। এটা কাম্য নয়।

অপর দিকে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির একটি টিম ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও নগদ টাকা সহায়তা প্রদান করেন। ঘটনাস্থল মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবুর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ।

যশোর কোতোয়াালি থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, হামলার পরে আমরাও কয়েকবার ঘটনা স্থলে গিয়েছি। একটি মামলা করেছে ভাড়াটিয়ারা। বিষয়টি তদন্ত ও আসামীদের আটকের চেস্টা চলছে। #