স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ

গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানাধীন বারেন্ডা উত্তরপাড়া এলাকার রাজমিস্ত্রী মোঃ জামান মিয়া হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের আত্মীয় মোঃ জালাল (৫৩)‌-কে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কাশিমপুর থানার মামলা নম্বর ২৬, তারিখ ২৪ জুলাই ২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪ অনুযায়ী পিবিআই তদন্তে উঠে আসে পারিবারিক সম্পত্তি ও ঋণের টানাপোড়েন থেকে জন্ম নেয়া দীর্ঘদিনের বিরোধই এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ।

নিহত জামান মিয়া দীর্ঘ সাত বছর ধরে নিজ মালিকানাধীন বাড়িতে বসবাস করতেন এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার মেয়ে জাকিয়া খাতুন জানান, ২৩ জুলাই সকালে তার ফুফু ফরিদা বেগম প্রথমে জামান মিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে চলে যান। পরে সকালে তার ফুফা মোঃ জালাল বাসায় এসে দরজায় ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখেন, জামান মিয়া গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় পাকা মেঝেতে পড়ে আছেন। তার চিৎকারে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা ছুটে আসেন এবং পুলিশে খবর দেন।

জাকিয়া খাতুন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেয় এবং বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঐদিন রাত ১১টা ৩০ মিনিটে কাশিমপুরের বারেন্ডা উত্তরপাড়া থেকে আসামি মোঃ জালালকে গ্রেফতার করে।

তদন্তে বেরিয়ে আসে, আসামি জালাল ৪টি এনজিও থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে অর্থকষ্টে ভুগছিলেন। কিস্তির টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি তার শ্যালক জামান মিয়ার কাছে তার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ চায়। জামান টাকা দিতে অস্বীকার করলে ঝগড়ার এক পর্যায়ে জালাল পেছন থেকে ঘরে থাকা একটি বটি দিয়ে তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, "এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। শুধুমাত্র সম্পত্তি ভাগ ও আর্থিক সংকটের কারণেই জামান মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।" তিনি আরও বলেন, "হত্যাকাণ্ডটি শুধু পারিবারিক দ্বন্দ্ব নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা যা বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্থিক চাপ, পারিবারিক ভাঙন ও সম্পত্তিগত বিরোধ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা আমাদের সমাজে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা প্রতিরোধে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।"

তিনি জানান, অভিযুক্তের বাড়ি থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে এবং জালাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকান্ড টি পরিকল্পিত কিনা তা অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক সনজিৎ বিশ্বাস জানান, "তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। মামলার অন্যান্য দিক গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"