কক্সবাজার ও টেকনাফ সংবাদদাতা : কক্সবাজারের টেকনাফে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে মাদক কারবারীরা। নতুন-পুরাতন মাদক কারবারীরা মিলেমিশে জুট বেঁধেছে। চালিয়ে যাচ্ছে জমজমাট মাদক ব্যবসা। এরই মধ্যে একমাসে প্রচুর মাদকসহ বেশ কয়েকজন মাদক কারবারী গ্রেপ্তারও হয়েছে। তবুও থামছে না মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম। প্রশাসনের অভিযানে পাচারকারীরা গ্রেপ্তার, হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যাচ্ছে মাদকের রাঘববোয়ালরা। এতে মাদক কারবারীদের লাগামটানা যাচ্ছে না। এই সব মাদক কারবারের বেশিরভাগ টাকার লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। জানা গেছে, গত মাসের ১ লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১২ লাখ ৩৮ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এসময় প্রায় ২৮ জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আকষ্মিকভাবে মাদক কারবার বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফের সচেতন মহল ও শিক্ষিত সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বিশেষ করে মাদক কারবারীরা গরিব ও অসহায় নারী-পুরুষদের টাকার লোভে ফেলে ইয়াবা পাচার করাচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে করে সাধারণ বহনকারীরা মাদকসহ গ্রেপ্তার হলেও মাদকের গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে মাদক কারবার সহজেই থামানো যাচ্ছে না। মাদকের গডফাদাররা আইনের আওতায় না আসায় মাদকের বিষয়ে সরকারের ঘোষিত জিরো ট্রলারেন্স নীতিও আশানুরূপ ফলাফল দিচ্ছে না। টেকনাফের সুধী সমাজের ভাষ্য,যতদিন মাদকের মুল মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাবে, ততদিন মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে বড় বড় মাদকডনদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান সুধী সমাজ।
টেকনাফের সচেতন নাগরিক কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক এহসান উদ্দিন বলেন,মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হলে পাচারকারীদের চেয়ে আগে মাদকের মূল গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এরপর বিকাশ,নগদসহ যেসব মোবাইল ব্যাংকিংগুলো অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসায়ীদের পরোক্ষভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে তাদেরকেও নজরদারিতে রাখতে পারলেই মাদকসহ অবৈধ কর্মকান্ড কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এদিকে মাদক কারবারীদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে টেকনাফের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিকাশ,নগদ ও রকেট ব্যবসায়ীরা মাদক কারবারীদের অবৈধ টাকার লেনদেনে সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে। মোবাইল ব্যাংকিংগুলোর পরোক্ষ সহযোগিতায় মাদক কারবারী ও অপহরণ চক্রের সদস্যরা সহজেই তাদের অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক বিকাশ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। এমনকি অপহরণকারী ও মানব পাচারকারীদের মুক্তিপণের টাকার লেনদেনও এসব মোবাইল ব্যাংকিংগুলো করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে করে মাদক কারবার ও অপহরণ বাণিজ্য আরো বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, বিকাশ ও নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকগুলোকে প্রশাসনের নজরদারি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নগদ ও বিকাশ ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের নজরদারিতে রাখতে পারলে প্রায় মাদক কারবারীরা লেনদেনে কোনঠাসা হয়ে পড়বে। টেকনাক উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল হুদা বলেন, সীমান্তে মাদক কারবারীরা প্রায় লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে করে থাকে। টেকনাফে বিকাশের দোকানগুলোতে মাসিক লেনদেনের প্রতি পুলিশ প্রশাসন তদারকি করলে মাদক কারবার,মানবপাচার ও অপহৃতদের মুক্তিপণের অবৈধ আদান প্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে মাদক কারবারীদের ব্যবসা অর্ধেকটাই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং মানবপাচার ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কারীরাও কোনঠাসা হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই, চার্জশীতে অন্তর্ভূক্ত করি। বিকাশের ব্যাপারে কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা তদন্ত করে দেখবো।