ইবি রিপোর্টার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল্লামা ইকবালের দর্শন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-ভিসি অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম এবং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু ভাষা ও সাহিত্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ইকবাল একাডেমি পাকিস্তানের পরিচালক অধ্যাপক ড. বাসিরা আমব্রিন এবং লাহোরের ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনের ইসলামিক ও ওরিয়েন্টাল লার্নিং ডিভিশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।

সেমিনারে অধ্যাপক ড. বাসিরা আমব্রিন ‘আল্লামা ইকবালের খুদির (আত্ম) ধারণা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উপস্থাপিত প্রবন্ধে তিনি বলেন, ইকবালের ‘খুদির বার্তা মূলত সেইসব তরুণ প্রজন্মের জন্য যারা মিল্লাতের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। ইকবাল এমন এক আত্মিক শক্তি যুবকদের মধ্যে সঞ্চার করতে চেয়েছেন, যা ইসলামী সভ্যতার মৌলিক মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ইকবাল তাঁর দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণদেরকে স্থাপন করার মাধ্যমে তিনি খুদির ধারণাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন যা এর আগে আমাদের সংস্কৃতিতে ছিলো না। পূর্বে ‘খুদি’ শব্দটি অহংকার বা আত্মম্ভরিতার অর্থে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ইকবাল স্ব-মূল্যায়ন, আত্ম-পরিচয় ও নিজস্ব সত্তার উপলব্ধি অর্থে খুদিকে ব্যবহার করেছেন।

এ ছাড়া অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উর রহমান খান ‘শাহীন (ঈগল) তত্ত্বে আল্লামা ইকবালের ধারণা’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, শাহীন ধারণায় মুসলিম উম্মাহর পতনের বিষয়ে ইকবাল গভীর সমালোচনা করেছেন। তিনি হারানো গৌরবের পুনর্জাগরণ এবং যুবকদের নিষ্ক্রিয়তা দূর করে শাহীনের গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হতে ঈগল প্রতীকটি ব্যবহার করেন। ইকবালের মতে শাহীন হলো আদর্শ মানবসত্তার সামগ্রিক প্রতিলিপি। এই শক্তিশালী প্রতীকের মাধ্যমে ইকবাল ব্যক্তি ও সমষ্টির আত্মাকে পুনর্গঠনের একটি রূপরেখা প্রদান করেন যার লক্ষ্য হলো ইসলামি চেতনার পুনর্জাগরণকে ত্বরান্বিত করা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আজকের আলোচনায় ‘তাসাওয়ারে খুদি’ ও ‘খুদি’র ওপর ইকবালের দার্শনিক ব্যাখ্যা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। সাধারণভাবে ‘খুদি’ শব্দটিকে অহংকার বা ইগো অর্থে ব্যবহার করলেও ইকবাল ‘খুদি’ দ্বারা আত্মপরিচয় ও আত্মোপলব্ধিকে বুঝিয়েছেন। নিজের অস্তিত্বকে জানা মধ্য দিয়েই মানুষ তার ভেতরের শক্তি ও সামর্থ্যকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে। যখন মানুষ নিজেকে চেনে, তখন তার ভেতরের সম্ভাবনা জেগে ওঠে। সে নিজের অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে পারে এবং জীবনের কাজে সাহস, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার প্রকাশ ঘটায়। ইকবালের ‘খুদি’ মূলত সেই আত্মসচেতনতার দর্শন, যা নিজেকে চিনে সমাজ ও জাতির উন্নয়নে নিয়োজিত হতে শেখায়।”