ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্বে থেকেও নির্বাচন নিয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিবৃতিকে দ্বিমুখী আচরণ বলে মনে করছে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক।
গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় ডাকসু ভবনের সামনে নির্বাচন কেন্দ্রীক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংগঠনটি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউটিএলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউটিএলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন, অধ্যাপক মুনীরা জাহান প্রমুখ।
উদ্বেগ প্রকাশ করে অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক হতাশাজনক বিবৃতি প্রদান করেছে। জুলাই পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে সংগতকারণে সাদা দল নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং ১৮টি হলের মধ্যে ১৬টি হলের প্রভোস্টরা সরাসরি সাদা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনই সাদা দল ও দুইজন পিংক দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের অধিকাংশই সাদা দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্ব যখন সাদা দলের শিক্ষকদের হাতে ছিল। তখন নিজেদের বিবৃতিতে দাবি করা নির্বাচনে ‘জালিয়াতি ও অনিয়ম’ প্রসঙ্গটি এটি দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়েছে। এতে করে বিবৃতি দানকারী শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
মো. আতাউর রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ভোট শুরুর আগে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে খালি ব্যালট বক্স সিলগালা করা হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোথাও জালিয়াতি, কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই বা সিসিটিভি ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটেনি। ভোটগণনাও সিসিটিভিতে লাইভ দেখানো হয় এবং সবার উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তবু সাদা দলের অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ দেশবাসীকে মর্মাহত করেছে।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রে জয়-পরাজয় স্বাভাবিক। এই উপলব্ধি শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ বাড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়, এটি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত মুক্তচিন্তার কেন্দ্র। আধিপত্যবাদী মানসিকতা শিক্ষার্থীর স্বাধীন মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই ভোটারের রায় অগ্রাহ্য করে যে-কোনো মূল্যে বিজয়ের চেষ্টা বিভাজন ও সংঘাত সৃষ্টি করে, যা শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুণ্ন করে। এটি গণতান্ত্রিক অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস ব্যতীত আর কিছুই নয়। নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের সত্য প্রকাশ ও শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়াই দায়িত্ব।
পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে ইউটিএলের পক্ষ থেকে ৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
১. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উত্থাপিত অযৌক্তিক প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পর কোনো ধরনের হ্যারেসমেন্ট কিংবা তাদের ম্যান্ডেট কেড়ে নেওয়ার মত কর্মকাণ্ড বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২. ঢাবি সাদা দলের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পরিচালিত নির্বাচনকে সাদা দলের প্যাডে বিবৃতি দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। এই ধরনের বিবৃতি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাই।
৩. ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ইতোমধ্যে দেশ বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এমন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যেসব তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।