খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রো-ভিসি প্রফেসর শেখ শরীফুল আলম দুইজনের কেউই পদত্যাগ করেননি। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে তাদের অপসারণ করে কোনো প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়নি। শুধু তাদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কুয়েটের ভিসি (উপাচার্য), প্রো-ভিসি এবং একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।

দেশের গণমাধ্যমে কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসি পদত্যাগ করেছেন এমন সংবাদ প্রকাশিত হলেও, তা মূলত মন্ত্রণালয়ের এক ভুল উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পুরো ঘটনাকে ঘিরে এখন পর্যন্ত কেবল একটি আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার রাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি, দ্রুত একটি সার্চ কমিটি গঠন করে এই দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম সচল রাখতে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে কাউকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তির কোথাও উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদত্যাগ বা ইতোমধ্যে অপসারণের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ নেই।

পদত্যাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এক কথায় বলেন, ' দেননি' (পদত্যাগপপত্র)।

প্রো-ভিসি শেখ শরীফুল আলমও জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি; বরং তিনি তার অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা এবং অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঞা জানান, তাদের অপসারণের কোনো প্রজ্ঞাপন তার হাতে পৌঁছায়নি এবং কেউ পদত্যাগের অনুলিপিও জমা দেননি। তাই, আইন অনুযায়ী তারা এখনও দায়িত্বে রয়েছেন।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য কুয়েটের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বুধবার রাতে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, বৃহস্পতিবারও ভিসি ক্যাম্পাসের বাংলোতেই অবস্থান করেছেন। ওই দিন তিনি একাধিক অফিসিয়াল (দাপ্তরিক) নথিতে স্বাক্ষর করেছেন।

কয়েকজন কর্মকর্তাকে ব্যাকডেটে (পুরোনো তারিখে) বিভিন্ন দপ্তরে বদলির আদেশ করেছেন। এছাড়াও চারজনের ব্যাকডেটে নিয়োগের ব্যাপারেও স্বাক্ষর করেছেন।

অবশ্য একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে আগামী রোববার দুপুর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন কুয়েট ভিসি। রোববার দুপুরে তাকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয় থেকে জারি হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তিনি যাবতীয় অফিসিয়াল কাজগুলো সম্পন্ন করতেছেন। তবে এই স্বল্প সময়ে তাড়াহুড়ো করে ভিসি যেসব কাজ সম্পন্ন করছেন, তার বেশিরভাগই নিয়োগ, আর্থিক লেনদেন এবং বদলি সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

কুয়েটের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার মধ্যে একজন ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। যিনি উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি বুধবার রাতে ছাত্রদের পড়ে শুনিয়ে অনশন ভাঙ্গিয়েছিলেন।

কুয়েট ভিসিকে কেন দুর্নীতির সুযোগ রাখে এমন নিয়োগ-বদলি সংক্রান্ত কাজের জন্য অফিসিয়াল সময় দেওয়া হলো-এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয় তাকে কখন অপসারণের প্রজ্ঞাপন দেবে। তদন্ত করা ছাড়া আমাদের এখানে আর কোনো দায়িত্ব নেই। মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।'

ভিসি বা প্রো-ভিসির পদত্যাগের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন বলেন, 'এখানে তাদের পদত্যাগের কোনো বিষয় নেই। তাদের নিয়োগের শর্তেই আছে, সরকার যেকোনো সময়ে তাদের টার্মিনেট (অপসারণ) করতে পারে। মন্ত্রণালয় সেটা করবে।'