জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগতদের সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত হয়ে যায় ক্যাম্পাস। তৎকালীন প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি রাতভর এ তাণ্ডবে আহত হয় সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী। সেই ভয়াবহ ঘটনার এক বছর পার হলেও হামলার মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ন্যায়বিচারের দাবিটাই যেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনিক জটিলতায়।
মদদদাতা শিক্ষকদের বিচারকার্যে গঠিত স্ট্রাকচার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে জাকসু নির্বাচনের একমাস পর প্রকাশ করার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। অথচ নির্বাচন শেষ হওয়ার দুইমাস পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ পায়নি। প্রশাসনের এই ধীরগতি ও শিথিলতায় শিক্ষাথীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ বিচারকার্য শেষ করতে চায় কিনা?
জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রশাসনকে বারবার তাগাদা দিয়ে আসছি যাতে জুলাইয়ের হামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা হুশিয়ার করে বলতে চাই, যদি দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা না হয়, আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব। জুলাইয়ের প্রশ্নে আমরা আপসহীন।
শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে, প্রশাসনে বিএনপিপন্থী কিছু শিক্ষক থাকার কারণেই বিচারকার্যে গড়িমসি হচ্ছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেÑ তদন্তকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ছাত্রশিবির দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দীন মোহাম্মদ বাবর বলেন, আমার মনে হয়, জাকসুর মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের দোসররাই পুনর্বাসিত হচ্ছে। আমরা বারবার প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেÑপ্রশাসন ও জাকসুর ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররাই এই অভিযুক্তদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে আমরা আশুলিয়া থানায় ১৭২ জন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছি, কিন্তু এতদিনেও পুলিশ প্রশাসন কোনো আসামিকে গ্রেফতার করেনি। জাকসু ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, মদদদাতা শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে নির্বাচনের আগেও যেমন আমরা অনড় ছিলাম, এখনো তেমনই অনড় আছি। জাকসুর প্রথম কার্যকরী সভাতেই আমরা উপাচার্যের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। তিনি জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাবে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের অবস্থান একেবারে পরিষ্কারÑ আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত হোক।
তিনি আরও বলেন ‘আগামী কার্যকরী সভার প্রথম আলোচ্যসূচি হিসেবেই আমরা বিষয়টি রাখছি। প্রশাসন যদি আবারও গড়িমসি করে, তাহলে জাকসুর ব্যানারে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, তদন্ত যথার্থ প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে। একেক সাক্ষীর বরাতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, আবার অনেকে নতুন নতুন সাক্ষীর নামও সুপারিশ করছেন। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। আমরা চাই, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রমাণনির্ভরভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন হোক, যাতে আদালত থেকে আবার তা ফিরে না আসে।
উল্লেখ্য, এর আগে ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় হামলায় জড়িত অধ্যয়নরত ৬৪ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার ও ৭৩ জন সাবেক শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।