জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের (৫৪তম ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ এবং দিকনির্দেশনা দিতে 'নবীন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম-২৫' আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ব্যাচ ৫৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই বর্ণাঢ্য 'নবীনবরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রামটি' অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ব্যাচের উষ্ম অভ্যর্থনা জানাতেই শিবিরের এই আয়োজন।

বক্তব্য বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বিগত সময়ে ছাত্ররাজনীতি কলুষিত হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থ ও সহিংসতার রাজনীতি তরুণদের সৃজনশীলতা নষ্ট করেছে। অথচ বাংলাদেশের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যদি আমরা যুবসমাজকে নৈতিকতা, জ্ঞান ও দক্ষতায় গড়ে তুলতে পারিÑতাহলে এই জাতিই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের গুণগত পরিবর্তনের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, প্রতিটি শিক্ষার্থী জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে নৈতিক নেতৃত্বের ভিত্তি শক্ত করুক। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে তরুণরাই প্রধান চালিকাশক্তি।”

গুপ্ত ট্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মিথ্যা কথা বারবার বলার মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার পুরোনো নীতি থেকেই কিছু মহল আমাদের ওপর ‘গুপ্ত ট্যাগ’ দেয়। বাস্তবতা হলোÑআজকের এতোবড় নবীনবরণ অনুষ্ঠান প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, যা নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমেও প্রকাশ পাচ্ছে। এই উপস্থিতিই প্রমাণ করেÑআমরা স্বচ্ছ, ইতিবাচক ও গণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী।”

অনুষ্ঠানে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, সুতরাং, এদেশে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও তার সব দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে ইনসাফ-ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘খুনি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের দোসরদের এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই। কারণ তারা সন্ত্রাসী দল। লাশতন্ত্র কায়েম করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে। লোপাট করেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ধ্বংস করে দিয়েছে দেশের অর্থনীতিকে। পাশাপাশি ধ্বংস করেছে দেশের সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকেও।

শাখা সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪তম আবর্তনের নবীন শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনার জন্যই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত হয়েছে নবীন বরণ অনুষ্ঠান ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম ২০২৫। ক্যাম্পাসের প্রাণভোমরা হলো নবীন ব্যাচ, সেই নবীন ব্যাচদেরকে কেন্দ্র করে, তাদের ওপর জুলুম, নিপীড়ন করে বিগত সময়ে অন্যান্য দলের রাজনীতি আবর্তিত হত যা অত্যন্ত লজ্জাকর ও নিন্দনীয় বিষয়। আমরা নিপীড়নের রাজনীতির এই সিলসিলা ভেঙে দিতে চাই, তাই ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণের মাধ্যমে আমরা নবীন শিক্ষার্থীদেরকে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই যথাযথ গাইডলাইনের মাধ্যমে একটি উপযুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার মাধ্যমে নীতি নৈতিকতাকে সমুন্নত রেখে তারা দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সাফল্যে ভূমিকা রাখবে।

নবীন শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন,“ক্যাম্পাসের শুরুতেই ছাত্রশিবিরের এমন বর্ণাঢ্য আয়োজনে আমাদের নবীনবরণ আমাদেরকে যারপরনাই সম্মানিত করেছে। এটা আমাদের জন্য ক্যাম্পাসের অন্যতম বড় পাওয়া হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচকবৃন্দের আলোচনা ছিল তথ্যবহুল ও উদ্দীপনামূলক। সাইমুমের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পুরো অনুষ্ঠান মুখরিত ছিল। এমন বর্ণাঢ্য আয়োজনের জন্য শিবিরকে ধন্যবাদ।”

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রাশিদুল আলম।