সাইকেল পেল ২১ জন ছাত্রী, ১১ জন প্রতিবন্ধী পেল হুইলচেয়ার ভৈরব মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা রাখি আক্তার প্রতিদিন প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসে। প্রতিদিন যাতায়াতে তার খরচ হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। কৃষক বাবার পক্ষে এই খরচ বহন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই মাঝে মাঝে রাখিকে হেঁটেই তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে স্কুলে যেতে হতো। বিনামূল্যে একটি বাইসাইকেল পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত সুমাইয়া।
সুমাইয়া জানায়, বাবার ঘাম ঝরানো টাকায় গাড়িতে চড়ে স্কুলে যেতে আমার খুব খারাপ লাগত। তাই কষ্ট হলেও মাঝে মাঝে হেঁটেই স্কুলে যেতাম। এখন একটি বাইসাইকেল পেয়েছি খুব আনন্দ লাগছে, এ অনুভূতি ভাষায় বোঝানো যায় না। আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। একটি বাইসাইকেল আমার শিক্ষা জীবনে বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের উপজেলা উন্নয়ন তহবিল (ইউডিএফ) প্রকল্পের আওতায় মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দরিদ্র ও মেধাবী ২১ জন ছাত্রী এবং ১১ জন প্রতিবন্ধীর মাঝে বাইসাইকেল ও হুইলচেয়ার বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বাইসাইকেল ও হুইলচেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবদুল ছালাম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক আবদুল ছালাম বলেন, সারা দেশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। এজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেই উদ্যোগেরই একটি অংশ হিসেবে আজ এই বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। অনেক ছাত্রী আছে যারা দূরত্ব বা আর্থিক কারণে নিয়মিত স্কুলে আসতে পারে না। তাদের সেই কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দরিদ্র ও মেধাবী পরিবারের ছাত্রীদের হাতে এই বাইসাইকেল তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ছাত্রীদের স্কুলে নিয়মিত আসা সম্ভব না হওয়ায় অল্প বয়সেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। আমরা আশা করি, যারা আজ বাইসাইকেল পেয়েছে তারা নিয়মিত স্কুলে আসবে এবং শিক্ষা জীবনে আরও এগিয়ে যাবে। মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী দিয়া আক্তার নুপুর বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতের জন্য আমার ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, যা আমার বাবার পক্ষে বহন করা অনেক কষ্টসাধ্য। সেই কারণে মাঝে মাঝে আমি স্কুলে আসতে পারতাম না। এখন এই সাইকেলটি পেয়ে আমি নিয়মিত স্কুলে আসতে পারব। সাইকেলটি দেওয়ার জন্য সদর উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সেকেন্দার আলী বলেন, আমাদের ছাত্রীর বাবা একজন অসচ্ছল মানুষ। এই সাইকেলটি পেলে তাদের অনেক উপকার হবে। সে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারবে। এখন সে নিয়মিত স্কুলে আসবে, ভালোভাবে পড়াশোনা করবে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবে। তার শিক্ষাজীবনে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এটি দেওয়া হয়েছে, এবং আমি বিশ্বাস করি সে ভালোভাবে পড়াশোনা করবে। মদনাডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, সাইকেলটি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এখন আমি নিয়মিত স্কুলে আসতে পারব। মমিনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাব্বারুল ইসলাম বলেন, বাইসাইকেল বিতরণের মাধ্যমে নারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও ত্বরান্বিত করা হলো। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে স্কুলে আসত।