মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ। এখন চলছে প্রচারণা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। ২০ আগস্ট রাতেই নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির মনোনিত ডাকসুর ভিপিপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে যে নতুন সম্ভাবনার উন্মেষ ঘটছে, তা যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি উদ্বেগজনকভাবে নানা ধরনের মানসিক নিপীড়নের মুখোমুখিও হচ্ছেন নারী প্রার্থীরা। সামাজিক মাধ্যমে কটূক্তি, বিদ্বেষমূলক প্রচার, সাইবার বুলিং ও ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে নারী প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জুলাই আন্দোলনের সংগঠক এবং ডাকসুর ভিপিপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম।

বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে সাদিক কায়েম বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচনে অনেক নারী শিক্ষার্থী রাজনীতির চেনা বলয়ের বাইরে থেকেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে দুঃখজনকভাবে এখনও নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়নি।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করলেই নারীদেরকে কটূক্তি, প্রোপাগান্ডা, বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা, অপমানজনক ট্যাগিং ও সাইবার হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কেউ বাম ঘরানা থেকে আসুক, কিংবা ডানÑএই অবমাননাকর চর্চা থেকে কেউই মুক্ত নন। তাসনিম জারা, ফাতিমা তাসনিম জুমা, সাবিকুন্নাহার তামান্না এবং উম্মে ছালমাÑএমন কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর উদাহরণ তুলে ধরে সাদিক কায়েম বলেন, এই চর্চা কেবল ব্যক্তি আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং পুরো রাজনৈতিক পরিবেশকে নারীবান্ধব হওয়া থেকে বিরত রাখছে। ফলে অনেক নারী শিক্ষার্থী রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে উৎসাহ হারাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, চব্বিশের জুলাইবিপ্লবে নারী শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের সাহসী ভূমিকা আমাদের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু আজও নারীরা রাজনীতিতে প্রবেশ করতে গেলে নানা ধরনের অপমান ও প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সাদিক কায়েম রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কথা জানান। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পরে আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে নারীরা আতঙ্ক ছাড়া নিজেদের মত ও অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন। তিনি আরও লিখেন, আমরা জানি এই পথ মসৃণ নয়। তবুও নারীদের জন্য একটি নিরাপদ, মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে আমরা পিছপা হব না।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করার পাশাপাশি গণরুম ও গেস্টরুম কালচারের মূলোৎপাটন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করে তাদের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। যেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোভাবে থাকতে পারে এবং পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। ছাত্রদলের এ ভিপি প্রার্থী আরও বলেন, ছাত্রদলের প্যানেল বিজয়ী হলে গণরুম ও গেস্টরুম কালচারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে চিরতরে মূলোৎপাটন করা হবে। ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া থেকে রাজনৈতিক যেসব অপসংস্কৃতি ছিল, সেগুলোর মূলোৎপাটন করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আবিদুল ইসলাম খান বলেন, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেতাকর্মীদের ভোটাভুটির মধ্যদিয়ে ছাত্রদলের প্যানেলে প্রার্থী নির্বাচন করে আমরা যে ইতিহাস রচনা করেছি তা যে কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে বিরল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম ভোটাভুটির মধ্যদিয়ে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্রদল তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছে। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেটা হৃদয় থেকে স্বাগত জানাবে এবং সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের পাশে থেকে উৎসাহ দেবে। তিনি বলেন, একজন স্টুডেন্ট ফার্স্ট ইয়ারে ঢোকার পর তার পড়াশোনা, রেজাল্ট, গবেষণা, সহশিক্ষা এবং পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সেদিকে ফোকাস করবে।

ঢাবিকে পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে ছাত্রদলের প্যানেলের বেশি ফোকাস থাকবে জানিয়ে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। বাইরের হোস্টেল বা মেসে থাকলে তাদের প্রচুর পরিমাণে খরচ হয়। অনেকের পরিবার আর্থিকভাবে সমর্থন দিতে পারে না। তখন এসব শিক্ষার্থীর ৪-৫টি টিউশন করে চলতে হয়।

পরিপূর্ণ ইশতেহারে ছাত্রদলের চিন্তার প্রতিফলন শিক্ষার্থীরা দেখতে পারবে বলেও জানান আবিদুল ইসলাম খান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রদল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ অন্য নেতারা।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের অঙ্গীকারের কথা জানান। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে প্যানেল ঘোষণা করেন উমামা। প্যানেলে মোট ছয়জন নারীসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। সহ-সভাপতি (ভিপি)- উমামা ফাতেমা। সাধারণ সম্পাদক (জিএস)- আল সাদী ভূঁইয়া। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) জাহেদ আহমদ।

অন্যান্য পদের মধ্যে- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক নূমান আহমাদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মমিনুল ইসলাম (বিধান), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাফিজ বাশার আলিফ কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক- সুর্মী চাকমা সাহিত্য, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অনিদ হাসান গবেষণা, প্রকাশনা সম্পাদক সিয়াম ফেরদৌস ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাদিকুজ্জামান সরকার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক মো. রাফিজ খান, সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর সামাদ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ইসরাত জাহান নিঝুম, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে নুসরাত জাহান নিসু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্যদিকে সদস্য পদে আছেন- নওরীন সুলতানা তমা, আবিদ আব্দুলাহ, ববি বিশ্বাস, মো. শাকিল, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), অর্ক বড়–য়া, আবির হাসান, নেওয়াজ শরীফ আরমান, মো. মুকতারুল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, রাফিউল হক রাফি, মো. সজিব হোসেন ও সাদেকুর রহমান সানি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নাম ও ব্যালট নম্বরের পাশে প্রার্থীদের ছবি যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান। বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে ৪১টি ভোট দিতে হবে। একজন ভোটারের পক্ষে এত সংখ্যক প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর মনে রাখা কঠিন। তাই ব্যালট পেপারে অবশ্যই প্রার্থীদের স্পষ্ট ছবি দিতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে তারা তাদের সুবিধা অনুযায়ী ছবি বসাতে দেবে। অর্থাৎ, তারা যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোদ করবে সেভাবেই তাদের ছবি ব্যালট প্যাপারে যুক্ত করতে হবে। প্রার্থীদের ছবি যুক্ত করা অতীব জরুরি নতুবা একই নামে দুজন প্রার্থীর মধ্যে ভোট দিতে গিয়ে ভোটাররা কনিফিউশনের মধ্যে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা (জুলিয়াস সিজার) ডাকসুতে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে দাঁড়িয়েছে। তার মানে কী তার অতীতের ফৌজদারি অপরাধ মাফ হয়ে গেছে? সেসময় এই সিজার ভিপি নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেনের প্রচারণায় ডিম ছুঁড়েছিল। পাশাপাশি নারীদেরও লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগের এই নেতা।

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যদি প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বরের পাশে ছবি যুক্ত করা না হয় এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যদি ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে আমরা আবার আন্দোলনে নামব। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ডাকসুতে নির্বাচিত হলে তাদের কাজ কেমন হবে- তা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের মান, আবাসিক সঙ্কট, মেডিকেল ব্যবস্থার জন্য কাজ করে যাব। পাশাপাশি ডাকসুকে ক্যালেন্ডার ভুক্ত করে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের চেষ্টা করব, বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামুখী করার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী রাকিবুল ইসলাম ভোটের পরিবেশ নিয়ে বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত অবস্থানে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রোদ, বৃষ্টি , ভ্যাপসা গরমের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরিমিত পরিমাণে জায়গা রাখতে হবে, স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ভোটের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরা ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার শেষ দিন পর্যন্ত ডাকসুর ২৮ পদে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বিভিন্ন প্যানেলে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা ইতোমধ্যে তাদের প্রচারণা শুরু করেছেন।

আচরণবিধি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ :

ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসারের অফিস প্রার্থীদের আচরণবিধি বিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে কিছু কার্যক্রমকে সুস্পষ্ট আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কোনো প্রার্থী বা পক্ষ আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোনো ধরনের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারবেন না। তারা কোনো ধরনের উপঢৌকন বিলি-বণ্টন করতে পারবেন না। এছাড়া, আপ্যায়ন করানো, অর্থ সহযোগিতা করা কিংবা এ ধরনের কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ছয় বছর পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন।

প্রস্ঙ্গত এবারের ডাকসু নির্বাচনে ৯টি প্যানেলের নাম জানা গেছে। এরমধ্যে রাজনৈতিক প্যানেল ৭টি এবং স্বতন্ত্র ২টি। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ আগস্ট। পরদিন প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থী, সংগঠন ও সাধারণ ছাত্রসমাজকে।

ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর পোস্ট :

এমন এক সময়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী সামাজিকমাধ্যমে এক খোলা বার্তার মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকা কিংবা অন্ধ দলীয় আনুগত্যে বিশ্বাসী প্রার্থীদের ভোট না দেন।

তিনি লিখেছেন, যারা বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকে কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগ না দিয়ে কেবল রাজনীতি করে বেড়ায়, তাদের ভোট দেওয়া উচিত নয়। যারা নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে পারে না, তারা অন্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের নেতৃত্বও দিতে পারবে নাÑ এমন মন্তব্য করেন তিনি।

এছাড়া তিনি সতর্ক করেন সেইসব প্রার্থীদের বিষয়ে, যারা নিজেদের চিন্তার চেয়ে বড় কোনো নেতার নাম উচ্চারণ করেই প্রতিটি কথা শুরু করেন। তার ভাষায়, যারা পাঁচ মিনিট কথা বললেও এক নেতার নাম না বললে কিছু বলতে পারেন না, তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। এমন প্রার্থীরা ছাত্রদের স্বার্থ নয়, বরং অন্য কারও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নেই নিয়োজিত থাকবে।

ভোটারদের উদ্দেশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন তিনিÑ তা হলো, কোনো একটি প্যানেলের সবাইকে অন্ধভাবে ভোট না দেওয়া। তিনি আহ্বান জানান, প্রতিটি পদের জন্য আলাদা করে সবচেয়ে যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে খুঁজে নেওয়ার। যার আচরণ ভদ্র, যিনি ভালো করে কথা বলতে পারেন, যিনি সৎ, দক্ষ এবং নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাকেই ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি লিখেন, ‘হ্যাপি লীগ-ফ্রি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন’। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি চান একটি সুস্থ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন হোক; যেখানে কোনো দলীয় বলয়ের বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীরা মুক্তভাবে ভোট দিতে পারবেন এবং নেতৃত্ব বেছে নিতে পারবেন।

ফিটফাট হচ্ছে ডাকসু ভবন :

দীর্ঘদিনের অবহেলা আর জরাজীর্ণ চেহারা কাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন এখন নতুন সাজে ধরা দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের চোখে। যদিও প্রকৃত অর্থে বড় ধরনের সংস্কার কাজ এখনও শুরু হয়নি, জুলাই মাসকে কেন্দ্র করে ভবনটিতে আংশিক সাজসজ্জা ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে।

ডাকসু ভবন একসময় ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন কিংবা সাংস্কৃতিক জাগরণÑ প্রতিটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে এই ভবনের ভেতরেই জন্ম নিয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আন্দোলনের পরিকল্পনা, অধিকার আদায়ের লড়াই, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক কর্মকা-Ñ সবই এক সময়ে এই ভবনকে প্রাণবন্ত করে রেখেছিল।

কিন্তু দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়া এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটি প্রাণহীন হয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। পরে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি, যদিও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ নিয়মিত ফি আদায় করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সংগৃহীত এই অর্থের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার কারণে ভবনের আসবাবপত্র ভেঙে যায়, দেয়ালে ছেঁড়া পোস্টার জমে, অনেক কক্ষ তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

এবার নির্বাচনের আগে কিছুটা হলেও চেহারা বদলেছে ভবনের। জুলাই মাসকে কেন্দ্র করে দেয়ালে নতুন রঙ, করিডোর পরিষ্কার, আসবাবপত্র গোছানো, মধুর ক্যান্টিনের আশপাশে পরিচ্ছন্নতা আনা হয়। শিক্ষার্থীরাও গ্রাফিতি আঁকা ও করিডোর সাজানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তবে এখনও অনেক জায়গায় শ্যাওলা এবং দেয়ালের আস্তরণ খসে পড়তে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতে, বাজেট অনুমোদনের পর ডাকসু ভবনের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার শুরু হবে। এর মধ্যে থাকবে ভাঙাচোরা আসবাবপত্র পরিবর্তন, সব কক্ষের সংস্কার, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, আধুনিক কনফারেন্স রুম, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।

শিক্ষার্থীরা চান, ডাকসু ভবন শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সারা বছরই তাদের মিলন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কেন্দ্র হয়ে থাকুক। তারা আশা করছেন, এই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে ভবনটি আবারও শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা, সৃজনশীলতা ও আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হবে।

তফসিল অনুযায়ী, ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের আগে ডাকসু ভবন যে নতুন প্রাণ পাচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের মনে নতুন প্রত্যাশা জাগাচ্ছে। অতীতের গৌরব আর বর্তমানের উদ্দীপনা মিলিয়ে এটি আবারও হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীদের প্রাণকেন্দ্র।