টানা পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) রোববার (২০ জুলাই) সকালে একদল শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে বসেছিলেন। কিন্তু কোনো শিক্ষক না আসায় তারা দীর্ঘ সময় বসে থেকে ফিরে যান। এদিকে কুয়েটের ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবিতে দুপুরে মানববন্ধন করেছে গার্ডিয়ান ফোরাম। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের তিনতলায় গিয়ে দেখা যায়, ২১তম ব্যাচের অনেক শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অপেক্ষায় বসে আছেন।

এ সময় ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থার অবসান চাই। সর্বশেষ সিন্ডিকেট কমিটির সভায় ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যেটা এখনো কার্যকর আছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। তবে সেই সিদ্ধান্তের আড়াই মাসেও শিক্ষকেরা ক্লাস নিচ্ছেন না। আমরা হতাশ, আমরা চাই দ্রুত ক্লাস শুরু হোক।’

রেজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই। শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হয়। আমরা চাই, দ্রুত ক্লাস শুরু হোক। ক্লাস শুরু না হওয়া পর্যন্ত আমাদের হতাশা কাটছে না। এ কারণে আমরা ক্লাসে এসে বসে আছি।’

একই ব্যাচের শিক্ষার্থী জুলকার নাইন বলেন, ‘আমরা দ্রুত ক্লাস শুরু চাই। শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই, শিক্ষকেরা ক্লাসে এসে আমাদের ক্লাস নিতে শুরু করুন।’

আরিফ আলমাস রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আজ ক্লাসে উপস্থিত হয়েছি। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারছেন না তাদের নিরাপত্তাজনিত কারণে। এখন যদি শিক্ষকেরা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং ক্লাসে ফেরেন তাহলে আমরা আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে ইনশা আল্লাহ।’

আসির ফেরদৌস মুনতাসির অর্ক বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ। গত ২৪ এপ্রিল ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ৪ মে থেকে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আমাদের শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। পাঁচ মাস আমাদের ক্লাস বন্ধ। বাধ্য হয়ে আমরা আজ ক্লাসে এসেছি। এখন শিক্ষকেরা যদি আমাদের ওপর সদয় হয়ে ক্লাস নিতে আসেন, সেই অপেক্ষায় সবাই ক্লাসে বসে আছি।’

এদিকে দুপুরে কুয়েট গার্ডিয়ান ফোরামের উদ্যোগে প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবার ক্লাসে আসুক, এটা সবারই চাওয়া। শিক্ষকদের আমরা অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিন। যেসব সংস্থা এটার সঙ্গে যুক্ত, জরুরি ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কী করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্লাস শুরু হবে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিন। আমরা অভিভাবকেরা আপনাদের কাছে সেই অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এ সময় বক্তব্য দেন মো. ফররুক আহমেদ, আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ এনায়েত করিম, মকবুল হোসেন, মোহাম্মদ নায়েব আলী, সুশান্ত কুমার পাল, রুবাইয়া হিজাজী, আয়েশা আক্তার প্রমুখ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আতাউর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝতে পারলাম, কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষক দ্রুত ক্লাসে ফিরে সব একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে চান।’

এর আগে ১৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির অচলাবস্থা নিরসন করে একাডেমিক কার্যক্রমসহ সব ধরনের কার্যক্রম সচলের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কুয়েটের গার্ডিয়ান ফোরাম ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জেরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।