ঢাকার মালিবাগে অবস্থিত আবুজর গিফারী কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর নামে মিথ্যা-বানোয়াট প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ।

শনিবার (১০ মে) দুপুর ২টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্য্যাব) মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জনাকীর্ণ এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্ত্য পাঠ করেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ইয়ামিন রহমান। লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী গভর্নিং বডির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর কলেজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, আয় বৃদ্ধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, একাডেমিক কার্যক্রমকে গতিশীল, ভর্তি প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, লাইব্রেরিতে গবেষণাধর্মী বই সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী বা শ্রেণিকক্ষমুখী করা এবং বিভিন্ন ধরনের কো-কারিকুলার কার্যক্রমে অংশ হিসাবে শহীদ মুগ্ধ-ফারহান ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাঁর এসব সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কট্টর সমর্থক কিছু শিক্ষক শুরু থেকেই অসহযোগিতা করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন দুই মাস আগে অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদ। তাঁর বিরুদ্ধে বিধি বর্হিভূত কর্মকাণ্ড, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও নামে-বেনামে বিভিন্ন বিল-ভাউচার দিয়ে কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। কলেজকে অস্থিতিশীল করার পেছনে বশীর আহম্মদের অন্যতম সহযোগী অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক দেওয়ান মোঃ যুবরাজ আল ফাহাদ। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক। অথচ অত্র কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধিভুক্তি নেই। এ বিভাগের কোনো ছাত্র-ছাত্রীও নেই। একই ভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিরিন আক্তার মজুমদারের শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেট নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি কলেজ শি¶কদের চাকরির শর্তাবলী অনুযায়ী তাঁর নিয়োগ অবৈধ।

নানা অনিয়মে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০৫ সালের এনটিআরসিএ অনুযায়ী ২ জনেরই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ বিধি বহির্ভূত। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বিরোধিতার মুখে পড়েছেন গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা ৬ থেকে ৮ জন হবে। অভিযুক্ত এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাউশি, দুদক ও ডিআইএতে তদন্ত চলমান রয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকরা চাকরি হারানোর শঙ্কায় বেপরোয়া আচরণ করছেন। তাঁরা কলেজকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থে কলেজের স্বাভাবিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষকদের ভয়ভীতি, হুমকি দেওয়া, মব সৃষ্টির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মব সৃষ্টি করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিষেধ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, কয়েকজন ফ্যাসিস্ট অনুসারী পশ্চাদপসরণ মনোভাবের শিক্ষক, ভাগবাঁটোয়ারা, ভোগ ও অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী কিছু বহিরাগত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে নিয়োগ প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক এবং অছাত্ররা অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর নামে বিষোদগার করছে। কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক ও কলেজ গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি জুলেখা বেগম ২৯ এপ্রিল কিছু শিক্ষক ও বহিরাগতদের নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে মব সৃষ্টি করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেন গভর্নিং বডির সভাপতিকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। এটি চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ সময় গর্ভনিং বডির সভাপতির নামে অশালীন ও অশোভন মন্তব্য করেন। এর আগের দিন ২৮ এপ্রিল কলেজে উপস্থিত থাকলেও গভর্নিং বডির সভায় উপস্থিত থাকেননি জুলেখা বেগম এবং তাঁর প্ররোচনায় সভায় যোগ দেননি দাতা সদস্য আবুল মনসুর, হিতৈষী সদস্য রবিউল ইসলাম টিপু ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা। গর্ভনিং বডির এ বিতর্কিত সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে গভর্নিং বডির সভাপতির নামে মিথ্যাচার করে অভিযোগও করেছে। অথচ, এরা নিজেরাই বিতর্কিত। এদের গর্ভনিং বডির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অবৈধ ভোটার তালিকা করে জয়ী করা হয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে শঠতা, জোর-জবরদস্তি, অন্যদের নিবার্চনি ফর্ম কিনতে বাধা দেওয়া, অসহিষ্ণু হয়ে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে।

৮ মে বৃহস্পতিবার এই চক্রটি শিক্ষক পরিষদে শিক্ষকদের ডেকে দম্ভের সাথে গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী, বিদ্যোৎসাহী সদস্য অধ্যাপক আলী মোহাম্মদ কাওসারের নামে যাচ্ছেতাই ভাষায় মিথ্যা অভিযোগ করেন। এ সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নামেও বিষোদগার করা হয়। একই দিন সাধারণ শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে কিছু গণমাধ্যমে বানোয়াট তথ্য দেয়, যা ন্যক্কারজনক। জুলেখা বেগম-মনসুর গংরা চাচ্ছে, কলজে গভর্নিং বডি সহ সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে। ক্রয় কমিটিতে নিজেদের লোক রেখে ইচ্ছে মতো অর্থ আত্মসাত করতে, স্থানীয় পলিটিক্যাল ছেলেদের দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্য করতে।

লিখিত বক্তব্য শেষে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন, কলেজের শিক্ষক মো. মেহেদী হাসান হাওলাদার, মুহম্মদ গোলাম জিলানী সরকার, চৌধুরী আমিরুল ইসলাম বিপ্লব ও কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা দুইবারের ভিপি মো. আমিনুল হক আমিন। তাঁরা কলেজের অনিয়ম, দুর্নীতি, অবৈধ নিয়োগ ও গভর্নিং বডির নির্বাচনে বহিরাগতদের দিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন।

কলেজের সাধারণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা জুলেখা-মনসুর গংদের কবল থেকে কলেজকে রক্ষার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি আহবান জানান এবং পূর্ণ আস্থা, সমর্থন প্রকাশ করেন সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর প্রতি। পাশপাশি কলেজের স্বার্থে অসৎ-লুটেপুটে খাওয়া এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে।